রাজশাহীর পুঠিয়া পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি নেতা আল মামুন খানকে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত ২২ নভেম্বর জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের কপি পুঠিয়া পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এরপরও প্রায় একমাস ধরে অফিস করছেন সাসপেন্ড হওয়া মেয়র আল মামুন খান।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন গোপন রেখে ইতিমধ্যে মেয়র আল মামুন খান ৩২ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজের বিল পরিশোধসহ বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাও করেছেন। তবে সাসপেন্ড মেয়র আল মামুন খান দাবি করেন, তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বিলম্বে পেয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এক স্বামী পরিত্যক্তা নারী পুঠিয়ার মেয়র ও বিএনপি নেতা আল মামুন খানের বিরুদ্ধে দায়িত্ব নেওয়ার প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর পলাতক মেয়র মামুনকে বরগুনা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৬ দিন হাজতবাসের পর অস্থায়ী জামিনে মুক্তি পান মেয়র। তার বিরুদ্ধে ওই নারীর ধর্ষণের মামলা এখনো বিচারাধীন।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তাদের তালাক হয়। এরপর গতবছর মেয়র আল মামুন খানের সঙ্গে একটি চাকরির জন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। পূর্ব পরিচয়ের কারণে মেয়র আল মামুন, তার (ভিকটিম) দায়িত্ব নেওয়ার প্রলোভনে ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় মেয়রের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করলে মেয়র তার (ভিকটিম) বিরুদ্ধে লোকজন অন্তত ৮টি মামলা করান। এছাড়া মেয়রের বিরুদ্ধে দায়েলকৃত ধর্ষণের মামলা তুলে নিতে তাকে নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুঠিয়া পৌরসভার এক কাউন্সিলর জানান, গত বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) মেয়রকে সাসপেন্ডের বিষয়টি তারা জানতে পারেন। এর আগে মেয়র প্রায় একমাস জেল হাজতে থাকায় নানা কাজে পৌরসভায় এসে ভোগান্তির শিকার হন নাগরিকরা।
তারা আরও জানান, মেয়র সাসপেন্ড হয়েও প্রায় একমাসে তিনি পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের বিল পরিশোধের নামে অন্তত ৩২ লাখ টাকার বিলে সই করেছেন। পাশাপাশি পৌরসভার বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।
পুঠিয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, মেয়রকে সামপেন্ডের বিষয়টি আমরা অফিসিয়ালি জানতে পেরেছি ১৪ ডিসেম্বর। এরপর প্যানেল মেয়র কামাল হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র কামাল হোসেন জানান, আর্থিকসহ মেয়রের দায়িত্বের চিঠি তিনি ইতিমধ্যে পেয়ে কাজ শুরু করেছেন।
এদিকে সাসপেন্ড মেয়র ও বিএনপি নেতা আল মামুন খান দাবি করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে তাকে মেয়রের পদ থেকে সরানো হয়েছে। একটি মামলায় তিনি কারাগারে ছিলেন। জামিনের মুক্তির পর গত ৪ নভেম্বর আবারও মেয়রের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি অবগত ছিলেন না বলে আরও দাবি করেন তিনি।
সাময়িক বরখাস্ত পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতার দায়িত্ব পালন ও আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা প্রসঙ্গে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, ‘যদি এমন কিছু ঘটে থাকলে প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলরদের অভিযোগ পেলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।