শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিজয়ের পাঁচদিন পর ২১ ডিসেম্বর পাকমুক্ত হয় ঈশ্বরদী 

আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৫৭

১৬ ডিসেম্বর দেশে বিজয় আসলে ও পাক সেনারা ভারতীয় বাহিনী ছাড়া আত্মসমর্পণ করবে না বলে সিদ্ধান্ত জানায়, এ কারণে পাঁচ দিন পর ঈশ্বরদীতে বিজয় আসে।

সে হিসেবে ২১ ডিসেম্বর (বুধবার) ঈশ্বরদী হানাদারমুক্ত হয়।  মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঈশ্বরদী বিমান বন্দর, দেশের অন্যতম বৃহৎ রেলওয়ে জংশন, তৎকালীন সাঁড়ার বৃহৎ নদীবন্দর এবং সড়ক পথে উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে জেলার কেন্দ্র বিন্দু হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনারা ঈশ্বরদীতে শক্ত অবস্থান নেয়। ৯ মাস যুদ্ধের পর ২১ ডিসেম্বর পুরোপুরি শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয় ঈশ্বরদীকে।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা চান্না মন্ডল এবং ফজলুর রহমান ফান্টু জানান, দেশ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় আসলে প্রায় পাঁচ দিন পর ঈশ্বরদী সম্পূর্ণরূপে হানাদারমুক্ত হয়।

তবে মুক্তিযুদ্ধকালে কোম্পানি কমান্ডার (পাবনা) অ্যাডভোকেট কাজী সদরুল হক সুধা বলেছেন, দিনটি আসলে ১৯ ডিসেম্বর। তিনি বলেন, উত্তাল একাত্তরের এপ্রিল থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঈশ্বরদীতে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা।

তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের গবেষক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ তার বইয়ে ২১ ডিসেম্বর শত্রুমুক্তের কথা লিখেছেন।

ঈশ্বরদী হানাদারমুক্ত নিয়ে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল আহমেদ বলেন, ১৬ ডিসেম্বরে কিন্তু ঈশ্বরদী শত্রুমুক্ত হয়নি। আমরাও কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ লিপ্ত হইনি এ কারণে যে যাতে অযথা যেন ক্ষয়ক্ষতি না হয়। কারণ ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানি বাহিনী রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে। আমরা তাদের সঙ্গে যখন কথাবার্তা বলি তখন তারা বলেছে যে আমরা আত্মসমর্পণে রাজি আছি। তবে, ভারতীয় বাহিনী আসার পরে। অর্থাৎ ভারতীয় বাহিনী ছাড়া তারা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। সেই অবস্থায় যদি আমরা আত্মসমর্পণে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হতাম তাহলে বহু হানাহানি হতো দুপক্ষে। আমরা এটা এড়ানোর জন্য ১৬ ডিসেম্বরে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইনি। ১৯ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী আসার পরে ২১ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দলিলটা স্বাক্ষরিত হয়। সুতরাং ঈশ্বরদীয় বিজয় আসলো ওই দিনই।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফান্টু বলেন, ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার রঘুবীর সিং নাটোর থেকে এ অঞ্চলের পাকিস্তানি বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার মনজুর আহমেদকে বিশেষ প্রহরায় ঈশ্বরদীতে নিয়ে আসার পর ২১ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হয়। এরপর সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম ঈশ্বরদী শহরে এসে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা শুরু করেন।

কোম্পানি কমান্ডার (পাবনা) অ্যাডভোকেট কাজী সদরুল হক সুধা জানান, উত্তাল ’৭১-এর এপ্রিল থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঈশ্বরদীতে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ২৭ বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২৯ মার্চ মাধপুরের যুদ্ধ, ৬ নভেম্বর খিদিরপুরের এবং ১১ ডিসেম্বর জয়নগরের যুদ্ধসহ অন্যান্য গেরিলা যুদ্ধে তারা শহীদ হন। এসব যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর ৪০ সদস্য মারা যান।

ইত্তেফাক/আরএজে