বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিনামূল্যের পাঠ্যবই যথাসময়ে দেওয়ার চেষ্টা

আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৪১

প্রতিবারের মতো আগামী ১ জানুয়ারিতেও দেশব্যাপী পাঠ্যবই উত্সবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঢাকার আশপাশে বড় মাঠ রয়েছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান বাছাই করে কেন্দ্রীয় বই উত্সব করা হবে। আর প্রাথমিক স্তরের বই বিতরণের কেন্দ্রীয় উত্সব করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে।

তবে যে বই নিয়ে উত্সব, সে বই পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা রয়েছে এবারও। কাগজের মূল্য বৃদ্ধি এবং যথাসময়ে কাগজ পেতে দেরি হওয়ায় যথাসময়ে বই ছেপে স্কুলে পৌঁছানো যাবে কি না, এ নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তবে এনসিটিবির ও প্রেস মালিকরা জানিয়েছেন, সব বই না পৌঁছলেও  ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বই নিয়ে এই উত্সব অনুষ্ঠিত হবে।

এনসিটিবির বক্তব্য হলো, সব বই পৌঁছানো যাবে না। তবে এমন কোনো স্কুল বাদ যাবে না যেখানে বই পৌঁছবে না। সে বিষয়টিই নিশ্চিত করছে বই ছাপা ও মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম গতকাল রাতে ইত্তেফাককে বলেন, আগামী ১ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের ৮০ শতাংশ বই পৌঁছে যাবে। নতুন কারিকুলামে বই ছাপা হচ্ছে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে, এই বইও ৮০ শতাংশ পৌঁছে যাবে। আর প্রাথমিকের বই পৌঁছে যাবে ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত।

বছরের প্রথম দিনে বই নিতে এসে শিক্ষার্থীরা কি ফেরত যাবে—এমন প্রশ্নে এনসিটিবির শীর্ষ এই কর্মকর্তা বলেন, বছরের প্রথম দিনে সবাই বই নিতে আসে না। এই দিন ৫০ শতাংশ বই বিতরণ হয়। বাকিগুলো ধীরে ধীরে হয়। তাই বই পাওয়া নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে শতভাগ বই পৌঁছে দেওয়া যাবে বলে তিনি জানান।

এই কর্মকর্তা বলেন, কিছু প্রেস মালিক নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দের কারণে যথাসময়ে বই পৌঁছবে না বলে প্রচার করেছে। তাদের আমি প্রকৃত তথ্য জেনে প্রচারের অনুরোধ করেছি। বই যে পৌঁছানো হচ্ছে তার চালান আমার কাছে রয়েছে। কোনো ভুল তথ্য না দেওয়ার অনুরোধ জানান এনসিটিবির এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের স্তরের মোট ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ শিক্ষার্থী ধরে নিয়ে পাঠ্যপুস্তক ছাপা হচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীর জন্য বিনা মূল্যে ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯২৩ কপি পাঠ্যবই ছাপছে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। প্রাক-প্রাথমিক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বইসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে।

মোট বইয়ের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন ভাষার শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ৯ কোটি ৬৬ লাখ আট হাজার ২৪৫টি বই রয়েছে। অন্যদিকে মাধ্যমিক (স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি) স্তরের শিক্ষার্থীর জন্য ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪৫ কপি বই ছাপা হচ্ছে। 

অন্যদিকে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরে ৮০ জিএসএম (গ্রাম-স্কয়ার-মিটার) কাগজে ৮৫ শতাংশ উজ্জ্বলতা থাকতে হয়। বইয়ের যে মলাট তার কাগজের মান হবে ২৩০ জিএসএম। প্রেস মালিকরা আগেই জানিয়েছেন, কাগজের ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর যে সব শর্ত দিয়েছে সে অনুযায়ী বাজারে কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বই ছাপার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। শর্তের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় চেয়েছে প্রেস মালিকরা। তারা বলেছেন, বিষয়টি বিবেচনায় এনে ৮৫ শতাংশ উজ্জ্বলতা পরিবর্তে ৮০-৮২ শতাংশ করা উচিত।  এখন এনসিটিবি কাগজের উজ্জ্বলতা ৮২ শতাংশও মেনে নিচ্ছে। সময়মতো সব বই পেতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশে এমন ছাড় দেওয়া হয়েছে।

কাগজের মূল্যবৃদ্ধি, প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম দামে কাজ পাওয়া সহ কয়েকটি কারণে শুরু থেকেই বই ছাপাতে দেরি হয়। এই সুযোগে কিছু অসাধু প্রেস মালিক মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে নিম্নমানের কাগজের বই ছাপার অভিযোগও রয়েছে। এনসিটিবি আশা করছে, কাগজের মানে ছাড় দেওয়ার কারণে বই নিয়ে শুরুতে যে অনিশ্চয়তা ছিল তা কেটে গেছে। কারণ প্রেস মালিকরা আর কোনো অজুহাত খুঁজে পাবেন না।

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন