বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকে সরগরম ছিল কক্সবাজার

আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:৩২

তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছিল। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গত শনিবার রাত পর্যন্ত সৈকত নগরীর ছোট-বড় সব আবাসন প্রতিষ্ঠান কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। বিকিকিনি সচল ছিল চার শতাধিক রেস্তোরাঁ, বার্মিজ পণ্যের দোকানে ও শুঁটকি মার্কেটে। যাত্রী পেয়েছে ছোট-বড় যানবাহন। এ তিন দিনে দুই থেকে আড়াই লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ছিলেন। এতে পর্যটন সেবাসংশ্লিষ্ট সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে ধারণা করছেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কর্তৃপক্ষ।

পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, করোনা দুর্যোগের পর চালু হওয়া পর্যটন ব্যবসা গত মৌসুম থেকেই মন্দা যাচ্ছিল। এ বছর সবচেয়ে বাজে সময় কেটেছে পর্যটনে। এবার পর্যটন মৌসুম শুরুর পরপরই প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও নাব্যসংকটের দোহাই দিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে দুটি জাহাজ চলাচল করলেও তার ভাড়া অনেক বেশি। যা সাধারণ ভ্রমণপিপাসুদের নাগালের বাইরে। ফলে, কক্সবাজার বেড়াতে এসে যারা সেন্টমার্টিনকে ভ্রমণ তালিকায় রাখেন তাদের অনেকে সেটি স্থগিত রাখেন।

কক্সবাজার বেড়াতে এসে কিছুটা ছাড় পেয়ে অনেক পর্যটক কক্সবাজার থেকেই সেন্টমার্টিন দ্বীপ দেখতে গেছেন। তবে, এদের অনেকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করেছে। তাদের মতে, জাহাজেই সময় চলে গেছে সিংহভাগ। মাত্র ঘণ্টাখানেকের মতো সময় দ্বীপে অবস্থানের সুযোগ পেয়েছেন তারা।

কক্সবাজার বেড়াতে আসা পর্যটক

ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) আনোয়ার মোস্তফা বলেন, হতাশায় আলো দেখিয়েছে এই তিন দিনের ছুটি। এ ছুটি কাজে লাগিয়ে অনেকে আগাম বুকিং দিয়ে ওঠেন হোটেল-মোটেল ও কটেজ। ব্যয়বহুল জেনেও অনেকে আগাম টিকিট কেটেছেন কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে চলা কর্ণফুলী ও বারো আউলিয়া জাহাজে। ফলে সেন্টমার্টিনেও এবারে আগাম কিছু বুকিং পেয়েছেন সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, টানা বন্ধে আমাদের আশা ছিল কক্সবাজারে ৪-৫ লাখ পর্যটক আসবেন। কিন্তু তা হয়নি। এসেছেন আড়াই লাখের মতো পর্যটক। এরপরও আমরা আনন্দিত।

তারকা হোটেল হোয়াইট অর্কিডের জি এম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, অতীতে পুরো ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে প্রতিদিনই কমবেশি পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করতেন। এ বছর তার ব্যতিক্রম। এর পরও বড়দিন এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা তিন দিনে ছুটিতে শুক্র  ও শনিবার কক্সবাজারে গড়ে ১ লাখ পর্যটক উপস্থিতি ছিলেন। কিন্তু রবিবার তা কমে এসেছে। যারা সোমবার অফিস করবেন তাদের অনেকে ফিরে গেছেন। তাই এখন উপস্থিতি অর্ধলাখে এসে থামবে। যা-ই হোক, দীর্ঘদিন পর হলেও বিপুল পর্যটক উপস্থিতি কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আনন্দ বিরাজ করছে।

কক্সবাজার বেড়াতে আসা পর্যটক

কক্সবাজার জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, সমিতির তালিকাভুক্ত শতাধিকসহ কক্সবাজার পর্যটন জোনে চার শতাধিক রেস্তোরাঁ বিদ্যমান। পর্যটকশূন্যতায় সবাই দুর্বিষহ দিন কাটিয়েছিলাম আমরা। গত তিন দিন সবাই কমবেশি ব্যবসা করেছে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, পর্যটনে আয় হিসাব হয় জনপ্রতি খরচের ওপর। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকরা সব ধরনের সেবা গ্রহণে গড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ করেন। সেই হিসাবে তিন দিনে আড়াই লাখ পর্যন্ত পর্যটক উপস্থিতি থাকলে ২৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে কক্সবাজারের পর্যটন সেক্টরে। এটি আশাজাগানিয়া। তবে, কক্সবাজারের চলমান পর্যটনে ধোঁয়াশা চলছে। এটা কাটাতে সরকারের উদ্যোগী হওয়া দরকার।

কক্সবাজার বেড়াতে আসা পর্যটক

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, পর্যটকে কক্সবাজার সরগরম থাকলে পর্যটনসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো উত্ফুল্ল থাকে। ব্যবসা ভালো থাকলে আমরা ব্যাংক ঋণের কিস্তিগুলো নির্দ্বিধায় পরিশোধ করতে পারি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটক নিরাপত্তায় সৈকত ও আশপাশে পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন,  কক্সবাজারে আগত ভ্রমণপিপাসুদের সুবিধার্থে কলাতলী ডলফিন মোড়ে তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে ছিল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক টিম।

ইত্তেফাক/ইআ