বিগত দুই বছর করোনাভাইরাস মানুষের জীবনকে স্থবির করে দিয়েছিল। তবে ২০২২ সালে করোনা নিস্তেজ হয়ে ভয়ংকর না হলেও এবছর ভয়ংকর দাপট দেখিয়েছে ডেঙ্গু।
২০২২ সালে দেশবাসীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ডেঙ্গু। মশাবাহিত রোগটি থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না দেশের শহরাঞ্চলের মানুষরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা মশার উৎপাত আর ডেঙ্গুর ভীতি ছিল সর্বত্রই। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৭৬ জন মারা গেছেন। যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে মৃত্যুর হিসেবে রেকর্ড।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮ হাজার ৪২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬২ হাজার ২১ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩৯ হাজার ৫৬ জন এবং ঢাকার বাইরের ২২ হাজার ৯৬৫ জন।
কিছু দিন আগেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালেই শয্যা ফাঁকা ছিলো না । ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মধ্যে অনেকেরই চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে রক্ত।
নভেম্বরের শেষ দিক থেকে ঢাকায় এডিস মশার প্রকোপ কিছুটা কমতে শুরু করেছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীও কমেছে। তবে এখনো তা নির্মূল হয়নি। এরইমধ্যে আবার শুরু হয়েছে কিউলেক্স মশার উপদ্রব। ফলে বছরজুড়ে মশার পেছনে ছুটছে দুই সিটি করপোরেশন।
ঢাকায় মশা নিধনে কাজ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে এ কাজের ফলাফল নিয়ে ব্যাপক অসন্তুষ্টি নাগরিকদের।
নগরবাসীর অভিযোগ, ঢাকা দুই মেয়র মশা নিধনে ব্যর্থ। মশা নিধনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীও ঠিকমতো ওষুধ ছিটান না। মশার ওষুধের গুণগত মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। তারপরও এডিস মশা বাসা-বাড়ির আঙিনায় জন্মায়- এমন কথা বলে দায় এড়িয়ে গেছে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি। অথচ ডেঙ্গুজ্বরে আড়াইশোর বেশি মানুষ মারা গেছে। কিউলেক্স মশাও তারা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না।
চলতি বছরের ১৮ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগী কোথা থেকে আসছে, তা আমরা জরিপ করছি। কোন জায়গা থেকে কত রোগী আসছে, তা দেখা হচ্ছে। আমরা দেখেছি, ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে বেশি ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত হয়েছে। এখানেই মশা বেশি জন্মাচ্ছে। সারা দেশে ১৪শ’ রোগীর মধ্যে ঢাকার রোগী ১৩শ’র মতো (৯৩ শতাংশ)।’
ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, আগে মে-অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম ছিল। এখন সারা বছর ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আগে ডেঙ্গু ছিল শহরকেন্দ্রিক, কিন্তু এখন সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী। নিজেরা সচেতন না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। দিনের বেলায় মশারি টাঙানো, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ফুল হাতা জামা ও হাত-পায়ে মোজা পরতে হবে । জ্বর হলে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।