আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিদায়ী বছরে রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল বেশ উত্তপ্ত। ক্ষমতাসীন ও প্রধান বিরোধী দলসহ অন্যান্য দলের বিভিন্ন কর্মসূচি ছিল এ বছরে। এ সময় দেশব্যাপী পাল্টাপাল্টি হামলা, সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনা ঘটে। রাজনীতির মাঠে বছুরজুড়ে আলোচনায় ছিল বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগও ছিল সরব।
তবে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও জাতীয় কাউন্সিলে নেতৃত্ব, ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ, বিএনপির মহাসচিবকে গ্রেফতার ও দলের ৬ সংসদ সদস্যের পদত্যাগ ছিল বেশ আলোচনায়। এছাড়া রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপি ২৬ দফা ঘোষণা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নানা কর্মসূচি রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়।
১. ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ
নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নেতা-কর্মী নিহত এবং চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে গণসমাবেশ করে বিএনপি। দেশের সব বিভাগে বিএনপির গণসমাবেশের অংশ হিসেবে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ হয়।
২. বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ
বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচি দিয়ে বিএনপির রাজনীতি নতুন করে আলোচনায় আসে বিএনপি। চট্টগ্রাম থেকে বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচি শুরু করে দলটি। আর এটি শেষ হয় ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের মধ্য দিয়ে।
৩. আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল
দশমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন কমিটিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনার সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়।
৪. ফখরুল-আব্বাস গ্রেফতার
ঢাকার নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলার উস্কানি ও পরিকল্পনার মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে ৮ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুল এবং মির্জা আব্বাসকে তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে আটক করে পুলিশ।
৫. নয়াপল্টনে পুলিশের গুলিতে একজনের মৃত্যু
গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন বিকাল তিনটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় মকবুল আহমেদ নামে একজন নিহত হন। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতারা জড়ো হচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে বিকেল সোয়া চারটার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ।
৬. কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে নেতৃত্ব পরিবর্তন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সাদ্দাম হোসেনকে সভাপতি ও ওয়ালী আসিফ ইনানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। গত ২০ ডিসেম্বর এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
৭. যুবলীগের মহাসমাবেশ
আওয়ামী যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গত ১১ নভেম্বর যুব মহাসমাবেশের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভামঞ্চের সামনে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ উত্তোলন করেন দলীয় পতাকা।
৮. বিএনপির ৬ সংসদ সদস্যের পদত্যাগ
জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বিএনপির ছয় সংসদ সদস্য। গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে তারা এ ঘোষণা দেন।
ওই গণসমাবেশে জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ১১ ডিসেম্বর সকালে সশরীর স্পিকারের কাছে গিয়ে নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা দেন বিএনপির পাঁচ সংসদ সদস্য। তারাসহ ছয়জনের সংসদীয় আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করা হয়।
উকিল আবদুস সাত্তারের পদত্যাগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, জি এম সিরাজের পদত্যাগে বগুড়া-৬, আমিনুল ইসলামের পদত্যাগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, জাহিদুর রহমানের পদত্যাগে ঠাকুরগাঁও-৩, মোশাররফ হোসেনের পদত্যাগে বগুড়া-৪ ও রুমিন ফারহানার পদত্যাগে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ শূন্য ঘোষণা করা হয়।
৯. রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপির ২৬ দফা ঘোষণা।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ ঘোষণা করে বিএনপি। গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে ২৬ দফা ঘোষণা করে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ।
এর আগে ঢাকাসহ আট বিভাগেই গণসমাবেশ করে বিএনপি। সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ করে দলটি। সেখানেই এ রূপরেখা দেওয়ার কথা জানানো হয়।