‘কন্যা’ মানে শক্তি, মায়া, স্নিগ্ধতা, ভালোবাসা। আজকের কন্যারা বহুদূর এগিয়েছে। গত ৯ থেকে ১১ ডিসেম্বর ধানমন্ডির সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে তিন দিনব্যাপী ‘কন্যা’র ষষ্ঠ প্রদর্শনী আয়োজিত হয় ‘আত্মজা’ শিরোনামে। এতে ২৪ জন নারীর ৪১টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। ‘সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য’—রবীন্দ্রনাথের শাশ্বত এ উক্তিটি শিল্পের ক্ষেত্রে আত্মজাদের আত্মকাহিনির মধ্যে বিমূর্ত হয়ে উঠেছে। তাদের শিল্পকর্মের স্তরে স্তরে সেই সত্য ও সুন্দরের সুবাস দেহ-মনকে ঠিকই নাড়া দিতে পেরেছে। আর সুন্দরের মূল কথাটাই তো তাই; মনকে আন্দোলিত করা, নাড়া দেওয়া, মোট কথা ভালো লাগার একটা অনুভূতি জাগানো। আর সে সত্যটা যদি হয় প্রকৃতি প্রসূত তবে তার সৌন্দর্যটা হয় আরো বেশি! কেননা যা কিছু ভালো লাগার তার সবই প্রায় প্রকৃতিনির্ভর। আর একজন শিল্পী তাঁর শিল্পকর্মের সকল উপজীব্য বিষয়ই প্রকৃতি থেকে ধার করে নেন। সাধারণ একজন দর্শক যখন তার চির চেনা প্রকৃতিকে শিল্পীর বহুমাত্রিক উপস্থাপনে প্রত্যক্ষ করে তখন সে আপ্লুত হয় তার রস আস্বাদনে। এখানেই শিল্পী আর দর্শকদের মধ্যে একটা মেলবন্ধনের সৃষ্টি হয়।
শিল্পের ফেরিওয়ালা শাকিলা খান চয়ন তাঁর এবং আরো ২৩ জনের সৃষ্টিকে আপামর দর্শকের সামনে উপস্থাপন করে দর্শকের, শিল্পবোদ্ধার মনকে ক্রমাগত নাড়া দিয়ে আসছেন। তাঁদের সৌন্দর্যবোধটাকে শাণিত করছেন। আত্মজাবৃন্দের প্রতিটি শিল্পকর্মই প্রকৃতি থেকে পাঠ করা বিষয়ের দৃশ্যকলা। প্রতিটি শিল্পকর্মের ভিতর একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তাঁরা প্রকৃতির মাঝে নিজেদের খোঁজার চেষ্টা করেছেন এবং মনে হয় পেয়েও গেছেন। প্রকৃতির এই যে বহুমাত্রিক সৌন্দর্য তা তাঁদের প্রতিটি কাজের মধ্যেই গভীরভাবে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রকৃতির সত্যটাকে ধারণ করে তাঁরা সুন্দর সত্যটাকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা এক্ষেত্রে সফলও হয়েছেন। এখানে যেমন রং-রেখার জটিল উপস্থাপনে সৌন্দর্য খোঁজা হয়েছে তেমনই কঠিন পাথরকে সরলতা দান করে ভিন্ন অনুভূতির প্রকাশ ঘটানো হয়েছে। এটাই হলো একজন শিল্পীর দক্ষতা। তাঁরা প্রত্যেকেই শিল্পের প্রতি একধরনের মমত্ববোধ ধারণ করেন। প্রতিনিয়তই তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাচ্ছেন শিল্পের নতুন নতুন মাত্রা বের করতে!
এই শিল্প সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাকে এ পর্যায়ে আমি শিল্পের ফেরিওয়ালা বলেছি সংগত কারণেই! তাঁর বলিষ্ঠ নেত্রীত্বেই বাকি অন্য শিল্পীরা শিল্পের ভুবনে তাঁদের শিল্পকর্ম নিয়ে নিজেদের মেলে ধরতে পেরেছেন। দ্রষ্টা দু চোখ ভরে তার সৌন্দর্যের রস পান করতে পারছে, তার সুবাস গায়ে মেখে নিজের মননকে বোধকে শাণিত করতে পারছে। একইসঙ্গে স্রষ্টা ও দ্রষ্টার ভাবের একটা মেলবন্ধন তৈরি হচ্ছে, এটাই শিল্পীর সার্থকতা।