ছেঁড়া চোখ তিনটি পিঁপড়ে
সোহরাব পাশা
বৃষ্টি নামে
বধ্যভূমি থেকে উঠে আসে
খণ্ডিত প্রমিথিউস
মৃত্যু অনুবাদ করে দ্রুত হেঁটে যায়
কুয়াশার অন্ধকারে
পায়ের তলায় বিঁধে কাঁটা
চোখ উড়ে যায়—
বাবলাকাঁটায় ঝোপের আড়ালে
ভাষা শূন্য, স্বপ্ন শূন্য অনন্ত স্মৃতির পাতা ওড়ে
রাতের হাওয়ায় মন পোড়ে
অশ্রুসজল মায়ের মুখ
আত্মজার ছেঁড়া শাড়ির আঁচলে চোখ
বাবার কবরের ওপর ঘাসফুল
জোনাকির ওড়াউড়ি...
শস্যশূন্য মাঠ, খানা-খন্দে কাদাজল
পা আটকে যায় করোটির ভেতর
শহিদমিনারে ধাক্কা লেগে
খণ্ডিত দেহটা নুয়ে পড়ে
শুকনো ফুলের ভেতর
তিনটি বিষপিঁপড়ে খোঁজে
চোখ ও চোখের মাতৃভাষা...
-----------------------------------
ওইটুকুই আমি
আজাদুর রহমান
যতদিন তুমি আমাকে মনে রাখবে
ততদিন আমার মৃত্যু নাই,
ঐ স্মৃতিটুকুই আমি, আর বাদবাকি
হাড় মাংস চক্ষু জিহবা কর্ণ নাসিকা
হৃদপিণ্ড কলিজা ফুসফুস কিডনি
চামড়া চুল, স্মৃতিহীন ইনট্যাক্ট নিউরন
আরো যা যা সব তোমার মতো, এক।
শুধু স্মৃতিটুকু আলাদা, ঐটকুই
আমি।
আমি সময়কে খণ্ড খণ্ড করে গ্রহণ করেছি।
দীর্ঘমেয়াদি দৃশ্যের মধ্যে অনেক চরিত্র থাকে.
সেখানে গল্প বেড়ে যায়
সম্পর্কের ঠিক থাকে না,
ভুল হয়, ভয় হয়
তাছাড়া মানুষ প্রচুর মিথ্যা বলে।
-----------------------------------
নস্টালজিয়া
রায়হান উল্লাহ
অনাগত নারীতে
উত্তুঙ্গ হয়েই বলব—
আমি অনেক কষ্টে
তোমার হাত ধরব
কিছু যায় আসে কি?
অনাগত পিরিতে
উড়ুক্কু হয়েই বলব—
তুমি অনেক কষ্টে
আমার হাত ধরবে
কিছু যায় আসে কি?
-----------------------------------
শিশিরে শব্দের ঘ্রাণ
কুমকুম দত্ত
সংসারী হতে চাই ফের
অদেখা রমণীর সংসার ;
নিত্য ছলাকলা ঘুম ভাঙে
হাতের জোড়া কাঁকন শব্দে
নয়ন জুড়ে দেখা রাত কর্ণফুলি
জলের ছায়ায় অবিকল নার্সিসাস;
টলমলে শরীর, শিশিরে শব্দের ঘ্রাণ
নির্জন অন্ধকার রাত ছবি হয়ে যায়।
-----------------------------------
দরজার ওপাশে
হাসান ইমাম
এই তো আধখানা ব্যর্থ মানুষের ভাঙাচোরা
গতর—গরজ করি না তাই দরজায় ছিটকিনি
দেওয়ার, আলগোছে ভেজিয়ে রাখি কেবল;
বাইরে থেকে হয়তো আন্দাজ করা যায়—
ভেতরের হতশ্রীদশা, না জানি কতই জরাজীর্ণ...
একটিবার কবাট ঠেললেই দেখতে পেতে
টিমটিমে জ্বলছে তবুও কুপিটা—যদিও
পুড়তে পুড়তে মনের সলতেখানি হয়ে গেছে শীর্ণ...
-----------------------------------
নিখোঁজ খবর
গাফফার মাহমুদ
চেনা মানুষ চলে যায়, গ্রাম ছেড়ে দূরে যায়
পিতৃপ্রদত্ত ভিটেবাড়ি, জন্মভূমি-স্বর্গধাম ফেলে
অভাব যাতনা বুকে সয়ে একদিন নাই হয়ে যায়
শৈশবে একই গ্রামে যাদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি
আপন গ্রাম-জনপদ, রেখে যাওয়া পূর্ব বসতভিটা
স্মৃতিকাতরতা, বুকের চাপা কষ্টে কেবলই যাই চুমি
মানুষ কেন চলে যায়
নাই হওয়া মানুষের খবর
রাখে কি খবর কোনো রেখে যাওয়া গ্রামের মানুষ!
আমিও একদিন যদি নাই হয়ে যাই
গ্রামহারাদের মতো সুদূর গ্রাম ছেড়ে দূরে বহুদূরে
হারানো খবরের মতো খবর কাগজে হয়ে উঠি যদি
নাই হয়ে যাওয়া নিখোঁজ খবরটুকু পড়বে কি কেউ!
-----------------------------------
কাছে পাওয়া
তাহমিনা কোরাইশী
বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানোর
গল্প সে তো নয়
অতি সাদামাটা তার অবয়ব
কষ্টগুলো কোয়া কোয়া করে
বুনেছি চারধার
সুখ সকালের লাল কুসুমের আশায়
কেটে যায় শতাব্দী নিরাশায়
মাটি হয় পাথর, হলুদ সরষে ফুল মরে
দিয়ে যায় নীল কষ্টের বীজ।
রক্ত জমাট বরফনদী কূলকিনারা বিহীন
শীতলতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় আঁখির কাজল
রাত নামে চোখে, জেগে থাকি তবু
অহর্নিশ চাঁদে প্রতিবিম্বিত তুমি
জপি নাম নিশিভর
তিলতিল করে কেটে যায় দিন
দেখব ছুঁয়ে তোমার সেই মুখখানি
নদীতে থাকে যদি এক আঁজলা পানি।
-----------------------------------
পাখিবিদ্যা
আসিফ নূর
পাখিকে কখনও তুমি নিজ থেকে ধরতে যেও না,
ভয়ের একটু আভাস পেলেই পলকে উড়াল দেবে।
পাখিরা তোমার আশেপাশে এসে নাচানাচি করবে,
তুমি কিছু ছিটিয়ে দিলে খুঁটেখুঁটে খাবে;
আরেকটু আস্থা বাড়লেই খুব কাছাকাছি ঘেঁষবে।
তোমার ওপর পাখিদের ভরসা পরিপূর্ণ হলেই
ওরা একলাফে তোমার ঘাড়ে লাফালাফি বেছে নেবে,
তারপর খেলতে খেলতে ধরা দেবে হাতের তালুতে।
তার আগে ধরতে গেলেই ফেরারি পাখা মেলে পালাবে,
একটি ভুলের জন্যে তুমিও জীবনভর হাহাকারে পস্তাবে।
-----------------------------------
অপেক্ষা, ধৈর্য ও আমি
সন্দীপ সাহু
ফুল ফোটানোর প্রস্তাবে চুম্বন-ঝরনা রেখে
পাঠিয়ে দিই মেঘমেদুর শ্রাবণীর কাছে!
অপেক্ষা করে বসে থাকি সেইখানে,
ঝরনা নদী হয়ে বয়ে চলে ছায়াপথের পথে পথে!
অপেক্ষা, অপেক্ষায় রাখে ধৈর্যকে সঙ্গী করে!
প্রহরের পর প্রহর চলে যায়। কানে কানে বলে যায়,
অপেক্ষার কথা শুনবে, ধৈর্যকে কাছ ছাড়া করবে না।
প্রস্তাবে মাথা নেড়ে শ্রাবণী ঠিক আসবে। আসবেই।
হেসে আসবে ভেসে আসবে নেচে আসবে।
চুম্বন-ঝরনায় নেয়ে নেয়ে আসবে
মাহেন্দ্রক্ষণ সমাগত হলে! সেই পর্যন্ত
অপেক্ষা ও ধৈর্যের ঋষিবাক্য মন দিয়ে শুনতে হবে।
বোধিবৃক্ষের কথা না শুনলে, শ্রাবণী ফুল ফোটাবে না।