মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

আল আকসায় ইসরায়েলি মন্ত্রী, ক্ষোভে ফুঁসছে ফিলিস্তিন

আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:১৫

ইসরায়েলের কট্টর দক্ষিণ পন্থী নতুন জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গ্যভিরের জেরুসালেমের বিতর্কিত চত্বর পরিদর্শনের নিন্দা করেছে ফিলিস্তিনিরা।  

মুসলিম ও ইহুদিদের দুই সম্প্রদায়ের কাছেই পবিত্র এই নগরীতে রয়েছে আল-আকসা মসজিদ এবং ফিলিস্তিনিরা মনে করছে পবিত্র এই স্থানে ইসরায়েলি মন্ত্রীর এই সফর 'নজিরবিহীন একটা উস্কানি'।

বেন গ্যভিরকে দেখা গেছে কড়া নিরাপত্তা প্রহরায় ওই এলাকা পরিদর্শন করতে। বেন গ্যভির ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি একটা কঠোর মনোভাব নিয়েছেন, যা নিয়ে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে উদ্বেগ আর আতঙ্ক বাড়ছে।

এই স্থান এখন শুধু মুসলিমদের প্রার্থনাস্থল এবং সেখানে শুধু নামাজীদেরই প্রবেশাধিকার আছে। তবে বেন গ্যভির অনেক দিন ধরেই ইহুদিদের সেখানে প্রার্থনার অনুমতি দেবার আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ইহুদিদের কাছে টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত এই স্থান সকলের জন্য।

বেন গ্যভিরকে দেখা গেছে কড়া নিরাপত্তা প্রহরায় ওই এলাকা পরিদর্শন করতে।

এই চত্বরের ওপর দাবি নিয়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তিক্ততা ও বিভেদ অনেকদিনের। নভেম্বরের নির্বাচনের পর নতুন জাতীয়তাবাদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর উত্তেজনা বেড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে নতুন সরকার পাঁচ দিন আগে শপথ গ্রহণ করেন এবং নতুন সরকারের মন্ত্রী পদ পাবার পর এটাই ছিল বেন গ্যভিরের প্রথম সরকারি কর্ম তৎপরতা। পর্বত চূড়ার এই স্থানটি ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র ধর্মীয় স্থান এবং ইসলাম ধর্মে এটি তৃতীয় সবচেয়ে পবিত্র ধর্মীয় জায়গা।

প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে নতুন সরকার পাঁচ দিন আগে শপথ গ্রহণ করেন

ইহুদিরা বিশ্বাস করে, এখানেই নবী আব্রাহাম তার পুত্র ইসমাইলকে উৎসর্গ করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। এখানেই ছিল বাইবেলে বর্ণিত ইহুদিদের প্রথম ও দ্বিতীয় পবিত্র মন্দির। যা ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান বাহিনী ধ্বংস করে দেয়। এখানে একটি খ্রিস্টান ব্যাসিলিকাও ছিল যা একই সঙ্গে ধ্বংস হয়।

মুসলমানদের কাছে এই স্থান পরিচিত হারাম আল শরিফ নামে। প্রথম যুগের মুসলিমরা মক্কার আগে এর দিকে ফিরেই নামাজ পড়তেন এবং মুসলিমদের বিশ্বাস এখান থেকেই নবী ঐশ্বরিক উপায়ে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেন।

ইহুদিরা বিশ্বাস করে, এখানেই নবী আব্রাহাম তার পুত্র ইসমাইলকে উৎসর্গ করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন।

মুসলমানরা মনে করেন এই গোটা চত্বরটাই আল আকসা মসজিদের। ইহুদি এবং অমুসলিমরা ওই চত্বরে যেতে পারেন, কিন্তু সেখানে প্রার্থনা করার অধিকার তাদের নেই, যদিও ফিলিস্তিনিরা সেখানে ইহুদিদের ঢোকাকে ওই চত্বরের স্পর্শকাতর পবিত্র অবস্থানকে বদলানোর পাঁয়তারা হিসাবে গণ্য করেন।

ইসরায়েলের চরম দক্ষিণ পন্থী দল, বর্তমান সরকারের জোটের শরিক, ওৎজমা ইয়েহুদিৎ এর নেতা বেন গ্যভির অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন যে ইহুদিরা যাতে ওই পবিত্র স্থানে উপাসনা করতে পারে তার অনুমতি দিয়ে তিনি আইনে পরিবর্তন আনতে চান।

মুসলমানরা মনে করেন এই গোটা চত্বরটাই আল আকসা মসজিদের।  

আজ ওই স্থান পরিদর্শনের পর সোনালী গম্বুজবিশিষ্ট 'ডোম অব দি রক' বা 'কুব্বাত আল-শাখরা এর সামনে নিরাপত্তা বেস্টনি পরিবৃত নিজের একটি ছবি টুইটারে পোস্ট করে তিনি মন্তব্য করেছেন 'টেম্পল মাউন্ট সকলের জন্য উন্মুক্ত'।

প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি বেন গ্যভিরের সফরকে উস্কানিমূলক বলে ব্যখ্যা করেছে। তারা আগেই বেন গ্যভিরকে এই সফর না করার জন্য হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।

প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি বেন গ্যভিরের সফরকে উস্কানিমূলক বলে ব্যখ্যা করেছে।

আজ তার সফরের পর ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সফরের নিন্দা জানিয়ে বলেছে 'উগ্রবাদী মন্ত্রী বেন গ্যভির আল-আকসায় জোর করে ঢুকেছেন এবং আমরা একে নজিরবিহীন উস্কানি এবং সংঘাতকে বিপজ্জনক মাত্রায় বাড়িয়ে তোলা হিসাবে দেখছি।'  

এএফপি বার্তা সংস্থা জানাচ্ছে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস যারা গাযা ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে, তারা এটাকে 'অপরাধ' হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং প্রতিজ্ঞা করেছে এই স্থান 'ফিলিস্তিনি, আরব ও ইসলাম ধর্মের মানুষের জন্যই থাকবে।'

আজ তার সফরের পর ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সফরের নিন্দা জানিয়ে বলেছে 'উগ্রবাদী মন্ত্রী বেন গ্যভির আল-আকসায় জোর করে ঢুকেছেন

আর এই স্থানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা দেশ জর্ডান বেন গ্যভিরের আল-আকসায় এভাবে আকস্মিক ঢুকে পড়াকে 'সবচেয়ে তীব্র' ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে। অতীতে আরবদের বিরুদ্ধে বর্ণ বিদ্বেষী আচরণে উস্কানি দেবার দায়ে ইতামার বেন গভ্যির দোষীও সাব্যস্ত হয়েছিলেন।  

এই পবিত্র স্থান নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির জেরে ২০২১ সালের মে মাসে হামাস জেরুসালেমকে লক্ষ্য করে রকেট ছোঁড়ে এবং এর ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে ১১দিন ধরে লড়াই চলে।

আর এই স্থানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা দেশ জর্ডান বেন গ্যভিরের আল-আকসায় এভাবে আকস্মিক ঢুকে পড়াকে 'সবচেয়ে তীব্র' ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে।

ইসরায়েলের দক্ষিণপন্থী নেতা আরিয়েল শ্যারন ২০০০ সালে বিরোধী নেতা হিসেবে ওই স্থান সফর করলে তা ফিলিস্তিনিদের প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করে। এর পরবর্তীতে যে সহিংসতা হয় তা দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি অভ্যুত্থান বা ইনতিফাদায় রূপ নেয়।

সুত্রঃ বিবিসি

ইত্তেফাক/ডিএস