শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে অচল আদালত, বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি 

আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:৫৮

আইনজীবী ও বিচারবিভাগীয় কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালত ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিজিএম আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশনের উদ্যোগে আদালতে কর্মবিরতি ও মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করায় আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারককে (জেলা জজ) অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, বিচারককে প্রাণনাশের হুমকি, বিচারকাজে নগ্ন হস্তক্ষেপ, আদালতের কর্মচারীদের মারধর, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া, দুর্ব্যবহারসহ কতিপয় আইনজীবীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন বুধবার থেকে আদালতের বিভিন্ন প্রবেশ দ্বারে তালা ঝুলিয়ে জেলা জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন করে। এতে প্রচণ্ড শীতে জেলার অনেক দূর থেকে আসা শত শত বিচারপ্রার্থীরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হন। 

জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্যের প্রতিবাদে গত ১ জানুয়ারি থেকে ওই আদালত বর্জন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গত মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট বিচারকরা নিজেদের মধ্যে সভা করেন। ওইদিন নির্ধারিত সময়ের বেশ পরে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। 

এদিকে বুধবার সকালে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন অভিযোগের প্রতিবাদে আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি শুরু করলে বিচারাঙ্গনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বিড়ম্বনা শিকার হন জেলা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা।

এছাড়া সদর উপজেলার বিশ্বরোডের বিচারপ্রার্থী আবুল কাশেম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, তীব্র শীতের মধ্যে সকালে কোর্টে এসে দেখি কোর্টে তালা ঝুলছে। আজ (বুধবার) আমার মামলার তারিখ বুঝতে পারছি না কি হবে। 

সরাইল উপজেলা জজ মিয়া মেম্বার জানান, আমাদের আগে জানিয়ে দিলে আমরা আজ এই শীতে কোর্টে আসতাম না। আমরা টাকা-পয়সা খরচ করে এবং উকিল ও মহুরীকে বিল দিলাম কিন্তু কোনো কাজই হয় নাই। 

কসবা উপজেলার ধরখার গ্রামের আবদুল হালিম ইউনুছ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, কোনো উকিল মারা গেলে কার্যক্রম বন্ধ থাকে কিন্তু কোর্ট খোলা থাকে। আজ এসে দেখি কোর্টের গেইটে তালা।
 
মানববন্ধন চলাকালে কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কাজী উজ্জ্বল ইসলাম বলেন, বিচার কাজে নগ্ন হস্তক্ষেপ, এজলাশে প্রবেশ করে নথি ছিনিয়ে নেওয়া, কর্মচারীদেরকে মারধর করার প্রতিবাদে কতিপয় আইনজীবীর বিরুদ্ধে আমরা আজ এ মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন করছি। এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন মেহেদি হাসান, মো. নিশাত খান, মো. আবদুল ওয়াহাব, জেরিন আফরিন, মুহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, জসীম উদ্দিনসহ অনেকে ।

অন্যদিকে সকালে শত শত আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গনে এসে বিচারবিভাগীয় কর্মচারীদের মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ সময় শত শত আইনজীবী জেলা বার এসোসিয়েশন ভবনের সামনে জড়ো হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে থাকেন। একপর্যায়ে আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গনে জেলা জজ নিগার সুলতানার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আইনজীবী তানবীর ভূঁইয়া বিচার বিভাগীয় কর্মচারী ইউনিয়নের আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আশা করি জেলা জজ মহোদয়ের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আমরা মাননীয় আইনমন্ত্রী ও আইন সচিবের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এখনো কোনো কর্মসূচি দেই নাই। পরিস্থিতি ঘোলাটে করা হলে জেলা জজের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আদালত বর্জন করতে বাধ্য হবো।
 
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের অন্যায় মানববন্ধন ও কর্মবিরতির ফলে বিচারপ্রার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগের প্রতিবাদে এবং আইনজীবীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বুধবার দুপুরে আইনজীবী সহকারী সমিতির এক জরুরি সভা সমিতি ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। 

আইনজীবী সহকারী সমিতির সভাপতি রিয়াজুল করিম খান খায়েসের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছেনু ভূঁইয়া, সদস্য মামুনুর রশীদ, উত্তম ঘোষ, বাবুল মিয়াসহ অনেকে। সভায় জজকোর্ট কর্মচারী মোমিনসহ দুনীর্তিবাজ কর্মচারীদের শাস্তি দাবি করে আইনজীবীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন সহকারীরা।

ইত্তেফাক/পিও