শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

প্লাস্টিকের বিনিময়ে নিত্যপণ্য পাচ্ছেন সেন্টমার্টিনবাসী

আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৩০

দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পরিবেশ বিনষ্টকারী পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়েই ব্যাগভর্তি বাজার পাচ্ছেন দ্বীপের বাসিন্দারা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দ্বীপকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে সহায়তা করছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান। 

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সেন্টমার্টিনে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ থেকে এসব পণ্য দ্বিতীয় বারের মতো বিতরণ করা হয়েছে। গত এক মাস ধরে এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বিতরণ করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে—চাল, মসুরের ডাল, তেল, মুরগি, ডিম, আলু, পেঁয়াজ, আটা, সুজি, নুডলস, কম্বল, শীতের জামা, লুঙ্গি, চিনি, লবণ, টি-শার্ট, জুতা, সবজি ও  লাইফ জ্যাকেট।

জানা গেছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্লাস্টিকদূষণ কমাতে এক দল স্বেচ্ছাসেবী ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ উদ্যোগের আওতায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্থাপন করা হয়েছে প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর, যেখানে মানুষ তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকপণ্যের খালি পাত্র বা বোতল জমা দিয়ে তার বদলে নিতে পারেন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। 

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, ‘এ উদ্যোগ স্থানীয়দের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি, কমাবে পরিবেশ দূষণ। এই ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ প্রতি মাসে দুই বার করে চালু থাকছে। পক্ষকাল পর্যন্ত জমানো প্লাস্টিক বিনিময় করে প্রয়োজন অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিতে পারছেন অধিবাসীরা।’

উপকারভোগী সাবেকুন নাহার (৪৫) বলেন, ‘প্লাস্টিক দিয়ে যে চাল ডাল তেল কিনতে পারব, তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। এখন আমি প্লাস্টিক ফেলে না দিয়ে সংরক্ষণ করি। পাশাপাশি সৈকতে পর্যটকদের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকও সংগ্রহ করি।’

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, সংগৃহীত প্লাস্টিক দ্বীপ থেকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে রিসাইকেল করা হয়। প্লাস্টিকের একটি অংশ দিয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবীরা কক্সবাজারে তৈরি করেছেন বিশালাকৃতির একটি ‘প্লাস্টিক দানব’। এটি এশিয়ার সমুদ্রসৈকতের সবচেয়ে বড় দানব স্ট্যাচু।  এই দানব তৈরির মাধ্যমেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন মানবসমাজকে বার্তা দিয়েছে—প্লাস্টিকের ফলে পরিবেশ যে হারে দূষিত হচ্ছে, তা ধীরে ধীরে দানবে রূপ নিচ্ছে আর এই দানবই পরবর্তী সময়ে মানবসমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

তিনি আরও জানান, ‘প্রথম বার নিত্যপণ্য পেয়ে সবার আগ্রহ বাড়ায় এবারও বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বিনিময় হয়েছে। পরে পরিমাপ করে এর ওজন সম্পর্কে জানাতে পারব।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, সেন্টমার্টিনসহ অন্যান্য দ্বীপ ও সমুদ্রসৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার পরও মানুষের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে পুরোপুরি সফলতা আসছে না। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি তাদের সম্পৃক্ত করে যে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে জেলা প্রশাসন।  আশা করছি, এ উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা হবে।’

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিনিয়ত সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। এমনই একটি উদ্যোগ সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশ দূষণরোধে ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ স্থাপন। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে এই প্রকল্প। 

উল্লেখ্য, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন শিক্ষার অনুকূল বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। অনাথ ও বঞ্চিত শিশুদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিদ্যানন্দ এক টাকায় আহার, শীতকালীন ও ঈদে নতুন কাপড় বিতরণ, বিনা মূল্যে শিক্ষা কর্মসূচি এবং এক টাকায় চিকিত্সাসহ বেশ কয়েকটি নিয়মিত কর্মসূচি পরিচালনা করছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে পড়ানোর পাশাপাশি দেওয়া হয় শিক্ষা উপকরণও।

ইত্তেফাক/এমএএম