ইয়ামিনের বয়স ১৯ মাস। তিন দিন আগে তাকে গুরুতর নিউমোনিয়া ও হার্টফেইল অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন মা ইয়াসমিন আক্তার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে তাকে প্রথমে নরসিংদী হাসপাতালে তিন দিন চিকিৎসা করা হয়। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা তার আইসিইউ প্রয়োজন বলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পরামর্শ দেন। তখন বাবা-মা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলেও ইয়ামিন আইসিইউ সেবা পায়নি। তাকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে।
কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তাকে গুরুতর শ্বাসকষ্ট নিয়ে এখানে আনা হয়। কিন্তু আইসিইউতে শয্যা না থাকায় তাকে সেখানকার সেবা দেওয়া যায়নি। প্রতিদিনই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অন্তত ২০-২৫ জন রোগী জরুরি বিভাগে আসে। প্রতিদিনই পাঁচ থেকে সাত জন শিশুকে প্রয়োজন থাকলেও আইসিইউ সেবা দেওয়া যায় না। এই হাসপাতালে শিশুদের জন্য ১০টি আইসিইউ শয্যা আছে। বিশেষ প্রয়োজনে আরও চারটি ব্যবহার করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকরা জানান, ২১০, ২০৭ ও ২০৮ নম্বর ওয়ার্ডে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা আছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ নম্বর শয্যায় ইয়ামিনকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। আর অন্যপাশে লক্ষ্মীপুরের হরিপুর থেকে আসা হামিনকেও অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। তবে হামিন ও ইয়ামিনের অক্সিজেন দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য প্রকট। এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. আতাউল গণি জানান, হামিন সাধারণভাবে অক্সিজেন পাচ্ছে। কিন্তু ইয়ামিন পাচ্ছে নন রিব্রেদার মাস্ক সেবা। এই সেবার ফলে ইয়ামিন প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন পাচ্ছে। নিউমোনিয়ায় সাধারণ শ্বাসকষ্ট হলে তাকে প্রতি মিনিটে দুই লিটার থেকে অক্সিজেন দেওয়া শুরু হয়। এর চেয়ে বেশি শ্বাস কষ্ট হলে সে পায় ফেস মাস্ক সেবা, এর ফলে প্রতি মিনিটে তাকে পাঁচ-সাত লিটার অক্সিজেন দেওয়া হয়। আরও গুরুতর হলে রোগীকে হেড বক্স দেওয়া হয়। এর ফলে ঐ রোগীকে প্রতি মিনিটে সর্বোচ্চ এই সেবা দেওয়া হয়। হেড বক্স সেবা ও নন রিব্রেদার মাস্ক দেওয়া রোগীদের আইসিইউ সেবা দেওয়ার প্রয়োজন হয় কিন্তু না পেরে আমরা এই সেবা দেই। তিনি বলেন, এই ওয়ার্ডে সব রকমের রোগী আছে। প্রায় সব বেডে দুই জন করে রোগী আছে এমন প্রশ্ন করলে আতাউল গনি জানান, প্রতিদিন রাতে জরুরি বিভাগে এত গুরুতর অসুস্থ রোগী আসে যে, তাদের জন্য শয্যা সংকুলান হয় না। জেনারেল তিনটি ওয়ার্ডে মোট ৬০টি শয্যা আছে। তবে রোগী আছে ২০০ থেকে ২৫০ জন । ফলে একই শয্যায় দুই জন তো বটে রাতে প্রতিটি ওয়ার্ডের মেঝেতে রোগী পূর্ণ থাকে এবং এই অবস্থা নিয়মিতভাবেই চলে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গুরুতর অসুস্থ রোগীরা আসে। এদের শুধু নিউমোনিয়া থাকে না নিউমোনিয়ার সঙ্গে ক্যানসার, হার্টের সমস্যাসহ নানা রোগে জটিল অবস্থায় এখানে আসে। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সব সময় আইসিইউ সেবা দেওয়া যায় না। তিনি বলেন, সব পরিস্থিতিতে এখানে রোগী ভর্তি হয়। ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি রোগী ভর্তি আছে এখানে। শয্যা নেই বলে কোনো রোগীকে বিনা চিকিৎসায় ফেরত পাঠানো হয় না। ফ্লোরে, সিঁড়ির নিচে, যেভাবেই হোক রোগীদের ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। জটিল রোগীদের সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, আইসিইউ সংকট কাটিয়ে উঠতে খুব শিগগিরই আরও ১০ শয্যার আইসিইউ সেবা শুরু হবে।
এই অবস্থায় শিশুদের যাতে ঠাণ্ডা না লাগে সেদিকে গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকগণ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মায়ের দুধ খাওয়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, জন্মের পরে শাল দুধ শিশুর রোগপ্রতিরোধে টিকার কাজ করে। এই দুধ খেলে নিউমোনিয়া হলেও তা গুরুতর হবে না। একই সঙ্গে শিশুদের জন্য সরকারের টিকা কার্যক্রম সম্পূর্ণ গ্রহণ করার কথা বলেন তিনি। ঋতু পরিবর্তনের সময় অভিভাবকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন যেমন ঠাণ্ডার জন্য বিশেষ পোশাক ব্যবহার, বাইরের ধুলাবালি ও বেশি লোক সমাগম থেকে শিশুদের দূরে রাখার পাশাপাশি পরিবারের কারো সর্দি-কাশি হলে শিশুকে তার সংস্পর্শে না আসার পরামর্শও দেন।