শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আড়াইহাজারের সবজি যাচ্ছে বিদেশে

আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:১৭

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববাজারেও যাচ্ছে আড়াইহাজারের সবজি। ডিসেম্বরে কয়েক দফায় শুধু মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, লাউসহ বিভিন্ন সবজি রফতানি হয়েছে। জানুয়ারিসহ আগামী তিন মাসে আড়াইহাজার থেকে আরও সাত কোটি টাকার সবজি মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপে রফতানি হবে বলেও প্রত্যাশা স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও সবজি চাষিদের।

উপজেলায় চলতি বছর এক হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাদ হয়েছে দুই হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। বাঁধাকপি, ফুলকপি, রজবপাতা, লাউপাতা, লাউশাক, বরবটি, কাঁকরোল, উচ্ছে, ঝিঙে, লালশাক, ডাঁটা, জালি, কচুমুখী, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, টমেটো, পটোল, চালকুমড়া, লাউ, কাঁচাপেঁপে, কাঁচাকলা, শসা, শিম, লাউ, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, মুলাসহ অর্ধশতাধিক বিষমুক্ত সবজি আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডা, দুবাই, ইতালিসহ মধ্যপাচ্য ও ইউরোপের প্রায় ৩৫টি দেশে নিয়মিত রফতানি হচ্ছে। এছাড়া আড়াইহাজারের উৎপাদিত শত শত মণ সবজি প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য জেলায়।

ডিসেম্বরে কয়েক দফায় শুধু মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে রফতানি হয়েছে সবজি। ছবি: ইত্তেফাক

বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক সরাবদী গ্রামের শফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর ২০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন শীতকালীন সবজির আবাদ করেছি। এগুলোর মধ্যে লাউ, বেগুন, টমেটো, শিম, আখ আবাদ করেছি। ঢাকা থেকে রফতানিকারকেরা জমি থেকে সবজি কিনে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে রফতানি করেন। তাই নগদে ও বেশি দামে বিক্রি করে চাহিদামতো মুনাফা হয়।

সফিকুল ইসলাম আরও জানান, ২০ বিঘা জমির ফসল উৎপাদনে বছরে পাঁচ লাখের মতো খরচ হয়। প্রতি বিঘা জমিতে কম করে হলেও ৫ হাজার লাউ হয়। অন্তত ১২ হাজার কেজি টমেটো হয়। বিঘাপ্রতি তার জমিতে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ জন শ্রমিক সারা বছর কাজ করেন। গ্রামের কৃষকদের নিয়ে গঠন করেছেন 'সরাবদী আইএমএফ কৃষক সংগঠন'। সেই সংগঠনের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছেন। তার দেখাদেখি গ্রামের অন্তত ৮০ ভাগ লোক এখন কৃষিকাজ করেন।

সফিকুল বলেন, পাইকাররা আমাদের নিকট থেকে সবজি কিনে বিদেশে রফতানি করেন। সরাসরি আমরা বিদেশে রফতানি করি না।

ডিসেম্বরে কয়েক দফায় শুধু মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে রফতানি হয়েছে সবজি। ছবি: ইত্তেফাক

নগর জোয়ার গ্রামের শাহ আলম জানান, ২৫ বিঘা জমিতে লাউ, উচ্ছে, মরিচ, করোলা, শসা, কপিসহ বিভিন্ন সবজিজাতীয় ফসল চাষ করেন। চলতি বছরে এসব ফসল থেকে তার খরচ বাদে লাভ হবে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।

তিনি আরও জানান, আগে সবজিহাটে নিয়ে বিপাকে পড়তে হতো। বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি হলে দাম কমে যেত। তখন অনেক সময় লোকসানে সবজি বিক্রি করতে হতো। এখন বিদেশে রফতানি হওয়ায় সবজি বিক্রিতে আর কোনো সমস্যা হয় না।

পাইকার কামাল হোসেন জানান, তারা সরাসরি জমি থেকে সবজি সংগ্রহ করে ঢাকায় যাত্রাবাড়ী ও কাওরান বাজার আড়তদারদের কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকে প্রসেসিং করে রফতানিকারকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠান। তবে আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ গ্রামের ওজনের লাউ বিদেশে অত্যধিক চাহিদা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান ফারুকী জানান, আড়াইহাজার ও গোপালদী পৌরসভা, ব্রাহ্মন্দী, সাতগ্রাম, দুপ্তারা, হাইজাদী, ফতেপুর, উচিৎপুরা, খাগকান্দা, বিশনন্দী, মাহমুদপুর ও কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নে ৩০০ কৃষক রফতানির উপযোগী বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন ও সরবরাহ করছেন। এ বছর বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার ও সম্প্রসারণে উদ্বুদ্ধ করে পরিবেশ রক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার লাভ করেন আড়াইহাজাররের কৃষক শফিকুল ইসলাম। কৃষি অফিস থেকে বিষমুক্ত সবজি চাষে সেক্স ফেরোমন, হলুদ আটা টেপ ও আলোক ফাঁদ পদ্ধতিসহ নেওয়া হয়েছে বিশেষ পদ্ধতি।

কৃষি সম্প্রসরাণ অধিদফতর নারায়ণগঞ্জ শাখার উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল মাজেদ জানান, আড়াইহাজারের লাউ, ঢেরশ, বেগুন যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে। ইংল্যান্ডে একটি বাংলা মার্কেট রয়েছে। সেখানে প্রচুর চাহিদা দেশের সবজির।

ইত্তেফাক/এসকে