বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সাইবার ব্যুরো গঠনসহ একগুচ্ছ দাবি পুলিশের

আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:৩৩

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশে বেড়েছে সাইবার অপরাধ। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইন্টারনেটকেন্দ্রিক যে কোনো অপরাধমূলক কাজ নিয়ন্ত্রণে একটি স্বতন্ত্র ইউনিট গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। যার নাম হবে ‘পুলিশ সাইবার ব্যুরো’। পাশাপাশি সামনে এসেছে পুলিশ বাহিনীকে পৃথক বিভাগ বা স্বতন্ত্র অধিদপ্তর  হিসেবে গঠনের দাবি। এ ছাড়া আইজিপির র‍্যাংক ব্যাজ ফোর স্টার করা, পুলিশ হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজ করা, ডিএমপি কমিশনার ও র‍্যাবের ডিজিসহ পুলিশ বাহিনীতে সচিব পদমর্যাদার ১০টি পদ ‘গ্রেড- ১’ সৃজন, পুলিশের জন্য একটা বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় করাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়েছে।

চলমান  পুলিশ সপ্তাহের পঞ্চম দিন গত শনিবার রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন টেলিকম অডিটোরিয়ামে মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে নিজেদের বিভিন্ন দাবির কথা তুলে ধরেন বাহিনীটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।?  রাত ৮টায় মতবিনিময় সভা শুরু হয়। সভা শেষ হয় রাত ১১টার দিকে। আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব  মো. আমিনুল ইসলাম খান। এতে বিভিন্ন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপার, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান পুলিশ সদর দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, এক জন অতিরিক্ত আইজিপির  নেতৃত্বে বিদ্যমান পুলিশ কাঠামোয় থেকে স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে কাজ করবে প্রস্তাবিত পুলিশ সাইবার ব্যুরো। এ ইউনিটের অধীনে পিবিআই-এর আদলে প্রতি জেলায় সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠন করা হবে।

পুলিশ বিভাগ গঠনের দাবি : বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও আনসার ব্যাটালিয়নের মূল দপ্তরকে বলা হয় সদর দপ্তর। কিন্তু পুলিশের সদর দপ্তরকে বলা হচ্ছে পুলিশ অধিদপ্তর। সভায় কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র বিভাগ গঠন করা হলে আইজিপি মন্ত্রণালয়ে বসেই সিনিয়র সচিবের ভূমিকা পালন করতে পারবেন। আইজিপির পদটি সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবও একই পদমর্যাদার। পুলিশের ছুটি, বদলির মতো কাজগুলো এখন জননিরাপত্তা বিভাগের মাধ্যমেই করা হয়। পুলিশের চাওয়া এসব কাজ আইজিপির অধীনেই হোক। পুলিশকে অধীনস্থ দপ্তর হিসেবে ভাবাটা কলোনিয়াল চিন্তা। প্রায় ৩ লাখ সদস্যের এ বাহিনীকে পৃথক বিভাগ বা স্বতন্ত্র অধিদপ্তর  হিসেবে গঠনের দাবি জানানো হয়।

পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবি :সারা পৃথিবীতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশেও ফরেনসিক কিংবা সাইবার সিকিউরিটি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন, বিট পুলিশিং, জেন্ডার ইকুয়ালিটি পুলিশিংয়ের জন্য ‘পুলিশ ইউনিভার্সিটি’ বা ‘ইউনিভার্সিটি অব ক্রিমিনাল/ক্রাইম অ্যান্ড সিকিউরিটি’ নামে পুলিশের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবি উত্থাপন করা হয়। এ ছাড়া পুলিশ বাহিনীর জন্য আলাদা মেডিক্যাল কোর গঠনের দাবি পুরোনো।

পার্বত্য এলাকার নিরাপত্তায় এপিবিএন ব্যাটালিয়ন গঠনের দাবি : পার্বত্য শান্তিচুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা। সেটি শুরু হলেও নিরাপত্তায় পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়ার  প্রতিশ্রুতি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এক্ষেত্রে পার্বত্য এলাকায় তিনটি আলাদা এপিবিএন ব্যাটালিয়ন গঠন করার কথা।

দূতাবাসে পুলিশ কর্মকর্তার পদায়ন দাবি : বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৬০টিরও বেশি দূতাবাস ও মিশন রয়েছে। এক্ষেত্রে দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোতে পুলিশ সদস্যদের ডেপুটেশনে রাখার দাবি জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও গত চার বছরেও দাবিটি বাস্তবায়ন হয়নি।

১০টি পদ ‘গ্রেড-১’ করার দাবি : ডিএমপি কমিশনার ও র‍্যাব মহাপরিচালকসহ পুলিশ বাহিনীতে সচিব পদমর্যাদার ১০টি পদ ‘গ্রেড-১’ অন্তর্ভুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদকে চার তারকা জেনারেলের সমান করার প্রস্তাব করা হয়।

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, আইজিপি সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার। তাকে আর্থিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাচিবিক ক্ষমতা দেওয়া হোক। এছাড়া পুলিশের পঞ্চম  গ্রেডের যেসব কর্মকর্তা আছেন তাদের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষমতা পুলিশ সদর দপ্তরকে দেওয়ার দাবি করা হয়। এর বাইরে পুলিশ সদস্যদের খেলাধুলার জন্য স্বতন্ত্র স্পোর্টস ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও কমপ্লেক্স তৈরি, থানাপুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক গাড়ি সরবরাহ, পর্যাপ্ত ফুয়েল সরবরাহ, পুলিশে কর্মরত সাধারণ কর্মীদের (সিভিল স্টাফ) আজীবন রেশন নিশ্চিত করা, পুলিশ সদস্যদের মৃত্যুর পর তাদের পেনশন সুবিধা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি উত্থাপন করা হয় মতবিনিময় সভায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি-দাওয়া ও সমস্যাগুলো শোনেন। কিছু দাবির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সভায় উপস্থিত সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট সচিবকে নির্দেশ দেন তিনি। কিছু বিষয় দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।

ইত্তেফাক/ইআ