জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা মীর সাব্বির। নিজের পরিচালিত ও অভিনীত প্রথম সিনেমা দিয়েই এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘরে তুলতে যাচ্ছেন। এমন সাফল্যের পাশাপাশি নাটক, ওয়েব সিরিজ এবং সিনেমার নানা দিক নিয়ে তিনি কথা বললেন ইত্তেফাকের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ এম রুবেল
- নিজের পরিচালিত এবং অভিনীত প্রথম সিনেমা দিয়েই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন। এমন সাফল্য প্রসঙ্গে কী বলবেন?
হ্যাঁ, ‘রাতজাগা ফুল’ আমার প্রথম নির্মাণ, নিজের পরিচালিত সিনেমায় অভিনয়, চিত্রনাট্য ও প্রথম অনুদান পাওয়া। পাশাপাশি সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তি। সিনেমাটির প্রায় সবকিছুই আমার জীবনে প্রথম। সেই জায়গা থেকে এই অনুভূতি আসলে বলে বোঝানো যাবে না। অনেক ঘটনা মানুষের সারাজীবন মনে থাকে। তেমনি এটাও আমার স্মৃতিতে সারাজীবন গেঁথে থাকবে।
- প্রথম চলচ্চিত্রের সাফল্য দায়বোধ বাড়িয়ে দিলো? সেই জায়গা থেকে নির্মাণে নিয়মিত হবেন কি-না?
নিশ্চয় দায়বোধ দ্বিগুণ হবে। কাজ শুরু আগে বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়োজন হবে। অলরেডি শুরু হয়েছে। আমি মনে করি, এই সাফল্য চিন্তার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। নির্মাণের সঙ্গে অবশ্যই নিয়মিত যুক্ত থাকার ইচ্ছে আছে। তবে চলচ্চিত্র তো প্রতিবছর নির্মাণ করা সম্ভব না। কারণ নির্মাণ তো দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। নিয়মিত বলতে, আমার চেষ্টা এবং সাধ্যের মাঝে যখনই পারব চলচ্চিত্র নির্মাণ করব। এরইমধ্যে একটি সিনেমার চিত্রনাট্য রেডি করেছি। আশা করছি দুই মাসের ভেতর সিনেমাটির ঘোষণা দিতে পারব।
- গতবছর বেশ কয়েকটি সিনেমা নির্মাতা-শিল্পীদের আশার আলো দেখিয়েছে। এই ধারাবাহিকতা রক্ষায় চলতি বছর আপনাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে কি-না?
আমাদের তো বরাবরই হল, হলের পরিবেশ, বাজেটসহ নানা সংকটের ভেতর দিয়েই যেতে হয়। এর মাঝেও যে শিল্পী-নির্মাতারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন এটাই কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমার মনে হয়, নতুন বছরে সবকিছুরই ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে এবং তারুণ্যের জয়জয়কার হবে।
- সেন্সর জটিলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কথা হচ্ছে। আসলেই কী সেন্সরে পরিবর্তন প্রয়োজন?
এখন পুরো পৃথিবীই মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। নানা রকমের প্লাটফর্ম আসছে এবং সেন্সরের জায়গাটাও উন্মুক্ত হচ্ছে। তাই আমার মনে হয়, কোন বয়সের মানুষ কোন কাজগুলো দেখতে পারবে, এর ওপর একটি নীতিমালা করা যেতে পারে। এটা দেখানো যাবে না, ওটা দেখানো যাবে না, এমন ধরা-বাঁধা নিয়ম না রেখে নতুন ধ্যান-ধারণা রাখলে আমার মনে হয় ভালো হবে।
- ওটিটির ডেভেলপমেন্টকে কীভাবে দেখছেন?
সিনেমা হলের মতোই কিন্তু টাকা দিয়ে মাধ্যমটিতে ওয়েব সিরিজ-সিনেমা দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটা অবশ্যই ভালো দিক।
- ওটিটির কাজগুলো প্রশংসিত হলেও শুরু থেকেই কিন্তু অশ্লীলতার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি মাধ্যমটির জন্য একটি খসড়া নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে অভিযোগটি কমবে কি-না?
দেখুন, আমি এখনও খসড়া নীতিমালাটি দেখিনি। তাই সেভাবে কিছু বলতে পারছি না। তবে এটুকু বলবো, একটা শৃঙ্খলার মাধ্যমে যদি সবার মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে তাহলে সেটা খারাপ না।
- শোবিজে সিন্ডিকেট নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়। আপনি এই বিষয়টিতে বিশ্বাসী কি-না?
- ভালো জিনিসের সিন্ডিকেট আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু একে ছাড়া কাজ করব না, একে-ওকে নিতেই হবে, এমন হলে সেটা অবশ্যই খারাপ।
ভিউ গুণে কাস্ট, স্ক্রিপ্ট ছাড়া নির্মাণ এবং গল্পের অভাব নাটককে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে?
এই বিষয়গুলোর নেতিবাচক প্রভাবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এক ধরনের দৈন্যতার মাঝে রয়েছে। ভিউ খুঁজতে গিয়ে নাটককে ব্যবসায়িক পণ্যে রূপ দিয়েছি আমরা। এতে করে ভালো নির্মাতা, নাট্য রচয়িতা এবং নতুন শিল্পী তৈরিতে প্রভাব ফেলছে। ফলে নাটক এক জায়গায় স্থবির হয়ে আছে। বিষয়টি নিয়ে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের সচেতন হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
- কিন্তু অনেকেই তো বলছেন, গল্পনির্ভর কাজ বাড়ায় প্রকৃত শিল্পীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আপনি কেমন দেখছেন?
মূল্যায়নের বিষয়টি তৈরি হতে কিন্তু সময় লাগে। আমাদের ভালো কন্টেন্ট এবং নির্মাতার খুবই অভাব। তাছাড়া কাউকে বাধ্যবাধকতার মাঝে রেখে ভালো কাজ সম্ভব না। কাজে স্বাধীনতা দিলে সেখান সিনিয়র -জুনিয়র সবাই সুযোগ পাবে এবং ভালো নির্মাতা-শিল্পী, সর্বোপরি ভালো কাজ এমনিতেই বেরিয়ে আসবে।