- ইত্তেফাক: শুভ অপরাহ্ন আবদুলরাজাক গুরনাহ। বাংলাদেশে আপনাকে স্বাগতম। ঢাকা লিট ফেস্টে এসে আপনার কেমন লাগছে?
আবদুলরাজাক গুরনাহ: আমার বেশ ভালো লাগছে। আমি ভালোই উপভোগ করেছি। আসলে আপনি যখন এমন সাহিত্য উৎসবে আসবেন তখন আপনি নানা কাজে ব্যস্ত থাকবেন। এমন আয়োজনে খুব বেশি ঘুরে দেখার সুযোগ থাকে না। কিন্তু আমি যতটুকু দেখেছি, বেশ উপভোগ করেছি। - ইত্তেফাক: আপনি কি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কে জানেন?
গুরনাহ: হ্যাঁ, আমি বাংলাদেশের কথা শুনেছি। এ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ইতিহাস সম্পর্কে আমার ধারণা রয়েছে। আর বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কেও আমি সামান্য কিছু জানি। তবে এই অনুষ্ঠানে এসে বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কে জানার আগ্রহ আরো বেড়েছে।
আমি যা দেখি তাই লেখি। আমি আমার জন্য বলি। ফলে আমি কোনো বৃত্তের ভেতরে থাকি না। লেখার পর পড়ে মনে হয় হয়তো এটিই লিখতে চাচ্ছিলাম। আবার কখনো মনে হয় কী এলোমেলো লিখলাম! আমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য কারো পক্ষে লেখা নয়, আমি যেভাবে দেখি সেটি লেখায় তুলে ধরি। আমি যখন কিছু পড়ি তখন আমার মতো করেই পড়ি
—আবদুলরাজাক গুরনাহ - ইত্তেফাক: ঢাকা লিট ফেস্ট এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাহিত্য উৎসবের মধ্যে আপনি কি কোনো পার্থক্য খুঁজে পান?
গুরনাহ: আসলে প্রত্যেকটি সাহিত্য উৎসবেরই নিজস্ব ধরন থাকে। তবে এখানে একটা ভালো দিক হচ্ছে, আপনাদের সাহিত্যানুরাগী দর্শকের সংখ্যাও অনেক। - ইত্তেফাক: একজন লেখকের কাছে লেখার সময় কোন বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পায় বলে আপনি মনে করেন?
গুরনাহ: একজন লেখকের লেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রেক্ষাপট। লেখকের প্রেক্ষাপট হলো তার স্মৃতি। এটি কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়, শুধু সাধারণভাবে কোনো ঘটনা স্মরণ করার মতো ব্যাপার নয়। এটি বিস্তারিত স্মরণ করার মতো বিষয়। মাঝে মাঝে পুনরায় যাচাই করারও প্রয়োজন পড়ে। লেখককে তার লেখার জন্য অনেক সাধনা করতে হয়, তাকে স্মরণ করতে হয় এবং পুনরায় যাচাই করতে হয়। একজন লেখককে লেখার প্রেক্ষাপট যতটা সম্ভব বাস্তবিক রাখার চেষ্টা করতে হয়। লেখার বেশ কতগুলো ধাপ রয়েছে। এর সঙ্গে অনেক মানুষ, অনেক ঘটনা ও চিন্তা জড়িত। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো—লেখা শুরু করা। - ইত্তেফাক: লেখার ক্ষেত্রে আপনার প্রেরণা কী?
গুরনাহ: আমি যা দেখি তাই লেখি। আমি আমার জন্য বলি। ফলে আমি কোনো বৃত্তের ভেতরে থাকি না। লেখার পর পড়ে মনে হয় হয়তো এটিই লিখতে চাচ্ছিলাম। আবার কখনো মনে হয় কী এলোমেলো লিখলাম! আমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য কারো পক্ষে লেখা নয়, আমি যেভাবে দেখি সেটি লেখায় তুলে ধরি। আমি যখন কিছু পড়ি তখন আমার মতো করেই পড়ি। আমি কখনো দেখি না আমার দর্শক কিংবা পাঠক কারা। আমি সবার জন্য লেখি—যারা আমার লেখা পড়ে।
- ইত্তেফাক: আপনার সাহিত্যচর্চা নিয়ে যদি কিছু বলেন?
গুরনাহ: লেখক হিসেবে আমার শুরুটা ছিল কোনো কিছুর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া থেকে। এটা এমন না যে আমি মাইগ্রেট করছি, এটি জীবনের একটা সিদ্ধান্ত ছিল। প্রতিশ্রুতি এমন ছিল না যে কোনো কিছু লেখার জন্য লিখতে হবে। এটি অতটা সহজ ছিল না আবার অন্য কিছু করব বলেও হাল ছেড়ে দেইনি। যখন প্রকাশ করতে পারিনি, তখনো মন খারাপ হয়নি। তখন মনে হতো, ইশ! যদি কেউ আমার বই প্রকাশ করত! তারপর আরেকটা লিখব, যেটা আমি করেছি। একই সময় সেই প্রতিশ্রুতি, আকাঙ্ক্ষাটা ছিল লেখার প্রতি। - ইত্তেফাক: আপনার লেখায় অনুষঙ্গ হিসেবে উঠে এসেছে শরণার্থীদের জীবনের গল্প। আপনি কি জানেন বাংলাদেশ দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে?
গুরনাহ: আমি রোহিঙ্গা সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানি না। তাদের সম্পর্কে অল্পকিছু শুনেছি। তবে তাদের সম্পর্কে লেখার জন্য যথেষ্ট তথ্য আমার কাছে নেই। - ইত্তেফাক: তরুণ লেখকদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
গুরনাহ: আমি একটাই কথা বলব। পড়তে হবে, প্রচুর পড়তে হবে। পড়ার বিকল্প নেই। - ইত্তেফাক: আপনার মূল্যবান সময় এবং মতামতের জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
গুরনাহ: আপনাকেও ধন্যবাদ।