পাবনার ঈশ্বরদীতে জানুয়ারি শুরু থেকে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোচ্ছে না কেউই। অথচ এই আবহাওয়াতেই গুনগুন করে গান গাইছেন আর কাজ করে চলেছেন ৪৫ বছর বয়সী রিয়াজ উদ্দিন।
ছেলে ও মেয়ে, স্ত্রী আর মাকে নিয়ে উপজেলার নুরমহল্লায় বসবাস করে আসছেন। লেপ তোশকের দোকানের কর্মচারী। কর্মচারীও ঠিক নয়, তিনি ধুনকার, দিনমজুরও বলা যায়। প্রতিটি লেপ তৈরি করে মজুরি পান ২৫০ টাকা। এছাড়া জাজিম তৈরিতে ৪০০ টাকা, তোশকে ২০০ টাকা আর দুই বালিশে পান ৫০ টাকা মজুরি। প্রায় ৩০ বছর যাবৎ ধুনকারের কাজ করে যাচ্ছেন।
শীতকালে ভালোই চলে। যত বেশি শীত-তত বেশি অর্ডার, ততই রোজগার। মৌসুমের উপার্জনে সংসারের খরচ বাদ দিয়ে ৪০-৫০ হাজার টাকা সঞ্চয় হয়। গরমে যখন কাজ থাকে না, তখন এ সঞ্চয় ভেঙে সংসার চলে।
সাবলীলভাবে রিয়াজ উদ্দিন বলেন, তাতেই কী গরমকাল পার হয় ভাই। সমিতি থেকে ঋণের ট্যাকা তুলি, আবার চড়া সুদে মহাজনের থেকেও ঋণ নিই। শীতকালে সেইসব ধার-দেনা শোধ কইরে দিই। শীত বেশি হইলেই ভালো। তা না হইলে কাজ কম হয়, ট্যাকা শোধ হয় না। মাছ মাংস ছাড়াই পার করি সারা বছর। ছেলে ও মেয়ের জন্য মাঝে মধ্যে এক পোয়া মাছ নিলেও আমরা খাইনা।
দোকানের মালিক রাজু আহমেদ সোহাগকে মজুরি বৃদ্ধি হয় না কেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, মাত্র তিন মাসের ব্যবসার লভ্যাংশ দিয়ে আমাদের সারা বছর চলতে হয়। এখন আর আগের মতো বিয়ে শাদীতে লেপ-তোশক দেওয়ার প্রচলন নেই। লেপের জায়গা দখল করেছে দামি কম্বল আর কমফোর্ট। তোশকের বদলে ম্যাট্রেস। আমরাও যে খুব ভালো আছি বিষয়টা কিন্তু তেমন না। গরমকালে এসে দেইখেন আমাদের অবস্থা কেমন থাকে।
রিয়াজের মতো মোস্তফার দোকানের খাইরুল, শিহাবের দোকানের কর্মচারী সাগরের গল্পটাও প্রায় একই রকম।
শহরের ফতেহমোহাম্মদপুর এলাকার বাদল বাজারের রেলওয়ে মার্কেটের আক্কাস আলীর গার্মেন্টস দোকানের কর্মচারী। গরমকালে বেতন ছয় হাজার হলেও শীতকালে বেড়ে তা ৮-৯ হাজারে দাঁড়ায়। শীত বেশি হলে বেচাকেনা বাড়ে, আর ব্যবসা ভালো হলে মালিক খুশি হয়ে ১১ হাজারও দিয়ে থাকে।
তাই শীত যত বেশি, ততোই বাদলের আনন্দ। কয়েকদিন ধরে যেভাবে শীত পড়ছে তাতে সে খুবই আশাবাদী এবারের মৌসুমে বাড়িতে নিজের জন্য আলাদা ঘর বানাতে পারবেন রিয়াজ।
একই দোকানের কর্মচারী সাঁড়া ইউনিয়নের মাজদিয়া গ্রামের সেলিম আগাম ইচ্ছেটা প্রকাশ না করে বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়া চাই, শৈত্যপ্রবাহটা যেন আরও মাস খানেক থাকে।