ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালীতে তিন দিনের ফুল উৎসব শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকালে এ মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছে, ফুলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের লক্ষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ উৎসবে ফুল রাজ্যকে সবার সামনে তুলে ধরতে ভূমিকা রাখবে।
ফুল উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম যশোরের গদখালি। এই গ্রামের নাম জানে না এমন কেউ নেই। এখানকার ফুলের সুভাস শুধু সম্মৃদ্ধি ছড়াচ্ছে না; দেশের অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধির সোপানও বৃদ্ধি করেছে। ফুলকেন্দ্রীক পর্যটন শিল্পের বিকাশে এই উৎসব কাজে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিভিন্ন সময়ে ফুল উৎপাদন-সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখা ১০ ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকারের যশোরের উপ পরিচালক হুসাইন শওকত, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মঞ্জুরুল হক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম, নারী ফুলচাষি সাজেদা বেগম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক।
এদিকে ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতেছেন এ অঞ্চলের ফুলচাষি ও সংশ্লিষ্টরা। ফুল ক্ষেতকে নবরূপে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি ফুল সেডকে এক একটি স্টলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। গদখালির পানিসারা হাড়িয়া ফুল মোড়ের ক্ষেতগুলো দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। এ মোড়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্টেগুলোকেও ফুল ক্ষেতের আদলে রূপ দেওয়া হয়েছে।
ইসমাইল হোসেন নামে ফুলচাষি জানান, ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে নতুন করে সেজেছে গদখালি-পানিসারা এলাকা। ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে নতুন করে প্রতিটি ঘরে ঘরে উৎসবে মেতেছে।
সাজেদা নামের ফুলচাষি বলেন, এই মেলা আমাদের ফুল চাষিদের মিলন মেলায় পরিণত করেছে। আমরা চাই প্রতিবছর এই মেলা আয়োজন করুক প্রশাসন। একই সঙ্গে মেলাটি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক জানান, ‘নানান রঙের ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ের যশোর জেলা।’ এমন স্লোগানে যশোর জেলাকে ব্র্যান্ডিং করেছে সরকার।
যশোরের ফুল, এই জেলার ঐতিহ্য সুদীর্ঘকালের। বৃহস্পতিবার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে তিনদিনের ফুল উৎসব। ফুলচাষি, ব্যবসায়ী দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এই মেলার শেষ হবে আগামী শনিবার।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, দেশে ফুলের বিশাল এই বাণিজ্যও শুরু হয়েছিল জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারাতে।
১৯৮২ সালের দিকে শের আলি সরদার রজনীগন্ধা ফুল চাষের মাধ্যমে এখানে ফুল চাষ শুরু করেন। যশোরে প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষি ১৫শ’ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিউলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল। দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগের বেশি যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ফুল এখন যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ায়ও। প্রথম দিকে বছরের নির্দিষ্ট কয়েক মাসে ফুল চাষ হলেও এখন প্রায় সারা বছরই ফুল চাষ হয়ে থাকে।