রোববার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৫ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বিসিক শিল্প নগরীর বেহাল দশা, আগ্রহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা  

আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৫৪

বাগেরহাটের একমাত্র বিসিক শিল্প নগরী নানা সমস্যায় জর্জরিত। সুপেয় পানির তীব্র সংকট, খানাখন্দে ভরা সড়ক, অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সংকটের অন্ত নেই প্রতিষ্ঠানটির। রাস্তাঘাটের বেহাল দশায় দুর্ভোগের সঙ্গে পরিবহন ব্যয় বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে বিসিক শিল্প নগরী। 

জোয়ারের পানি বাড়লে প্লাবিত হয় বিসিকের রাস্তাঘাট ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। দ্রুত সময়ের মধ্যে অবকাঠামোর উন্নয়ন করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরাঅবকাঠামো উন্নয়নের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে অচিরেই কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিসিক শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক মো. শরিফ সরদার।

বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর নোংরা ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ছবি: ইত্তেফাক

বাগেরহাট বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এর পক্ষ থেকে ১৯৯৬ সালে শহরের ভৈরব নদের পাশে প্রায় ২১ একর জমির উপর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নগরী গড়ে তোলা হয়। এই শিল্প নগরীতে ১২৩ প্লট রয়েছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ উপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্র। প্রতিটি প্লটই বরাদ্দ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বছর দশেক আগেও এখানে ৫৭টি শিল্প কারখানা চালু ছিলো। কিন্তু ভঙ্গুর অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে বর্তমানে মাত্র ৩৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ইজিবাইক সেটিংস, নারকেল তেল, অটো রাইস ও ফ্লোয়ার, সরিষা, ডাল মিল, পুরোনো প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণ, কোকোনাট ফাইবার মিলস অন্যতম। যেসব প্রতিষ্ঠানে অন্তত সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। অবকাঠামোর উন্নয়ন না হলে ব্যবসায়ীরা বিসিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। বেকার হয়ে পড়বে শত শত শ্রমিক।

বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর ভেতরে সড়কের বেহাল দশা। ছবি: ইত্তেফাক

বিসিকের মধ্যে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করা শ্রমিক ফেলী ব্যানার্জী বলেন, বিসিকের রাস্তার অবস্থা এত বেশি খারাপ যে হেঁটে চলায় দায়। রাস্তা খারাপের কারণে দুইগুণ ভাড়া দিলেও রিকশা চালকরা আসতে চায় না।

রিকশা-ভ্যান চালক বদিউজ্জামান বলেন, বিসিক ও আশপাশ এলাকায়ই রিকশা চালাই আমরা। আমাদের যাত্রীর বেশিরভাগই বিসিকের শ্রমিক, মালিক ও কর্মচারী। কিন্তু বিসিকের মধ্যে প্রবেশের তো উপায় নেই। রাস্তা এতো ভাঙা যে ঢুকলেই রিকশা উল্টে যায়। ইটের খোয়ায় টায়ার ফুটো হয়ে যায়। তাই অনেকের জোরাজুরিতে আসলেও, দুই-তিনগুণ ভাড়া নেই।

শওকত আলী ও আজাহের শেখ নামের দুই শ্রমিক বলেন, বিসিকে উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন এলাকায় যায়। এখান থেকে তো সরকার রাজস্ব পায়। তারপরও কেন অবহেলিত আমরা।

বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর সড়কে হাঁটুপানি । ছবি: ইত্তেফাক

নারকেল তেলের মিল সাহা এন্টারপ্রাইজের অন্যতম অংশীদার অশোক কুমার সাহা বলেন, পণ্য সরবরাহ ও কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য প্রতিনিয়ত ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতে হয় আমাদের। কিন্তু রাস্তা খারাপের কারণে খুবই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেকের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কেউ কেউ বন্ধ করে দিয়েছে তাদের ব্যবসা।

ঝর্ণা বেগম নামের এক নারী শ্রমিক বলেন, বিসিকের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয় আমাদের। কিন্তু এখানে সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। পানি কিনে খেতে হয়। অথবা বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। রান্না ও গোসলের জন্য পানির ব্যবস্থা করতে হয় বাইরে থেকে। এখানে যদি পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করার দাবি জানান এই নারী শ্রমিক।

বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর ভেতরে সড়কের বেহাল দশা। ছবি: ইত্তেফাক

ভাই ভাই ডাল মিলের মালিক কমল দাস বলেন, বিসিকের মধ্যে প্রত্যেকটি রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নিজেদের খরচে মিলের সামনে ইট, বালু ও খোয়া ফেলে মোটামুটি রাস্তাটা সচল রেখেছি আমরা। এমনকি বিসিকে প্রবেশের জন্য প্রধান ফটকের সামনের রাস্তাও নিজেদের খরচে রাবিশ ফেলে সচল রাখা হয়েছে।

বাগেহাট বিসিক শিল্পনগরী মালিক সমিতির সভাপতি শিব প্রসাদ ঘোষ বলেন, বিসিকের অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কাছে বারবার গেছি। কিন্তু কোনো উন্নয়ন নেই আমাদের। এতোগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকার পরেও এখানে কোনো ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। শুনি এখানে লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই টাকায় কি হয়? কি কাজ করে? আমরা জানতেও পারি না।

বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর ভাঙা সড়কে শুকানো হচ্ছে পণ্য। ছবি: ইত্তেফাক

তিনি আরও বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে বিসিকে শিল্প প্রতিষ্ঠান করার আগ্রহ হারাবে ব্যবসায়ীরা। বিসিককে সচল করতে অতিদ্রুত রাস্তা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়নের দাবি জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

বিসিক শিল্পনগরীর বাগেরহাটের উপ ব্যবস্থাপক শরিফ সরদার বলেন, বিসিকে অনেক কাজ রয়েছে। সব কাজ তো এক সঙ্গে হবে না। তবে কিছু সড়কের সংস্কার ও গেট নির্মাণের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।

ইত্তেফাক/পিও