শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এ বছরই ভারত থেকে পাইপ লাইনে আসবে ডিজেল

আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:০৩

বিশ্ব বাজারে তেলের জন্য হাহাকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে চড়া দামে জ্বালানি তেল কিনতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। এমন অবস্থায় দেশের তেলের বাজারে কিছুটা হলেও সুসময় আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এর কারণ ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন। এই পাইপলাইন দিয়ে ভারত থেকে সরাসরি পরিশোধিত তেল (ডিজেল) আসবে দিনাজপুরের পাবর্তীপুর ডিপোতে। এতে পূরণ হবে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মানুষের তেলের চাহিদা।

বিশেষ করে অন্যান্য আমদানিজাত তেল পাবর্তীপুর ডিপোতে পৌঁছাতে যেখানে প্রায় এক মাস সময় লাগে, সেখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে ভারত থেকে এই ডিপোতে তেল আসতে। সেখান থেকে উত্তরের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হবে এ তেল। এতে কমে যাবে পরিবহন ব্যয়। মোট ১৩১.৫ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে গেছে ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইনের। এখন চলছে নদীর ওপরের কাজ। যা এ মাসেই শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সব ঠিক থাকলে এর বছরেই পার্বতীপুর ডিপোতে এসে পৌঁছবে ভারতের তেল।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই পাইপলাইনটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। পরে ২০২০ সালের মার্চে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ভারতের লুমানিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। তবে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ আড়াই লাখ টনের মতো ডিজেল আমদানি করবে।

পরের বছরগুলোতে তা ৪ থেকে ৫ লাখ টন পর্যন্ত বাড়বে। চুক্তির অধীনে সরবরাহ শুরু হওয়ার দিন থেকে ১৫ বছরের জন্য ভারত থেকে ডিজেল কিনবে বাংলাদেশ। বর্তমানে লুমানিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ২ হাজার ২০০ টন ডিজেল আমদানি করে বিপিসি। ২০১৭ সাল থেকে ট্রেনে করে আসছে এ তেল।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বলছে, বর্তমানে জ্বালানি তেল আনার ক্ষেত্রে প্রতি ব্যারেলে (১৫৯ লিটার) গড়ে ১০ ডলার প্রিমিয়াম (জাহাজভাড়াসহ অন্য খরচ) দিতে হয় বিপিসিকে। তবে ভারত থেকে আনার ক্ষেত্রে এটি আট ডলার হতে পারে। প্রতি ব্যারেলে দুই ডলার কমলে প্রতি এক লাখ টনে প্রায় ১৫ লাখ ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব। তাই ভারত থেকে আমদানি হলে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এই পাইপলাইনের বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ১২৬ কিলোমিটার এবং ভারত অংশে ৫ কিলোমিটার। এর জন্য পঞ্চগড়, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় ১৯৯ দশমিক ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ অংশে মোট ১৩০ কিলোমিটারের বেশি পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে। পাঁচটি এসভি (সেকশনলাইজিং ভালভ স্টেশন) কাজও শেষ হয়েছে। প্রতিটি এসভি স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।

এছাড়া প্রকল্প এলাকায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজও প্রায় শেষের পথে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা যাবে। প্রাথমিকভাবে আড়াই লাখ টনের মতো ডিজেল আমদানি করবে এবং পরের বছরগুলোতে এটি চার থেকে ৫ লাখ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। চুক্তির অধীনে সরবরাহ শুরু হওয়ার দিন থেকে ১৫ বছর বাংলাদেশ ডিজেল নিতে পারবে বলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বলছে, প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক টিপু সুলতান বলেন, পার্বতীপুর রেলহেড ডিপোর বর্তমান ধারণ ক্ষমতা ১৫ হাজার টন থেকে ৪৩ হাজার ৮০০ টনে উন্নীত করা হচ্ছে। পূর্ব ভারতের লুমানীগড় থেকে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছে। শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা।

রিসিপ্ট টার্মিনালের নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স দীপন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এবং ওয়েল ডিপোর নির্মাণের দায়িত্বে আছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পাইপলাইনার্স লিমিটেড। অয়েল ডিপোর নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পাইপলাইনার্স লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (পিএম) তোজাম্মেল হোসেন জানান, অয়েল ট্যাংক নির্মাণের স্টিলপাত দক্ষিণ কোরিয়া অথবা ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। তবে এলসি খোলায় দেরি হওয়ায় কাজগুলো সময়মতো করা যায়নি।

এসব কাজ শেষ করেই এ বছরের শেষের দিকে তেল আনার কাজ শুরু হবে জানিয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, আমাদের আমদানি করার তেল এখন খুলনার বিভিন্ন ডিপোতে এসে জমা হয়। তা থেকে সড়কপথে বা জলপথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। এতে সময় এবং অর্থ দুটোই বেশি লাগে।

এই পাইপলাইন দিয়ে ভারতের তেল এলে উত্তরবঙ্গে তেল পাঠানোর খরচ আর থাকবে না। এতে অর্থ যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি ঐ অঞ্চলের মানুষজন অল্প সময়েই তেল পাবে। তবে এই তেল জাতীয় খাতের চাহিদা পূরণে এখনই তেমন প্রভাব না ফেললেও মোট চাহিদায় বড় একটা প্রভাব ফেলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের রিফাইনারি থেকে আন্তর্জাতিক বাজার দরেই ডিজেল আনা হচ্ছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে যেটি আনা হবে, সেটিও আন্তর্জাতিক বাজার দরেই আনা হবে। পাইপালাইনের মাধ্যমে ডিজেল আনতে পারলে আমাদের পরিবহন ব্যয় ও সময় সাশ্রয় হবে।

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন