শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পাহাড়ে জঙ্গিদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছে আরসা

আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬:০০

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরসার (আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি) সঙ্গে বাংলাদেশের নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। মিয়ানমারের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে ন্যাইক্ষংছড়ির পাহাড়ে সশস্ত্র ট্রেনিং নিয়েছে শারক্কীয়ার জঙ্গিরা। এরপর আত্মগোপনের জন্য তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প বেছে নেয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের দলের সদস্য বানানোরও চেষ্টায় আছে এই নতুন জঙ্গি সংগঠন। এর আগে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। আদালতে দেওয়া সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের জবানবন্দিতে এ তথ্য রয়েছে।

সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গ্রেফতার মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ ও মো. আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলম নামে দুই জঙ্গিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, পাহাড়ে র‌্যাবসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে নব্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে বেছে নিয়েছে।

এছাড়া তারা রোহিঙ্গাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টাও চালাচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে আরসার যোগসূত্র থাকার বিষয়টিও সামনে এসেছে। তারা আরসার কাছে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এমন ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে। ট্রেনিং প্রদানকারীর তালিকায় আরসার কয়েকজন সদস্যের নাম পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঐ নামের তালিকা ধরে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি সূত্র জানায়, পার্বত্য এলাকায় র‌্যাব ও অন্য বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে জঙ্গিরা কক্সবাজার ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান নেয়। এরপর তারা আরসার সঙ্গে বৈঠক করে। আরসার কাছে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য নতুন জঙ্গি সংগঠনের বেশ কিছু সদস্যকে মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে তারা নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার দুর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেন। এর আগে তারা পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের (কুকি ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট) কাছেও প্রশিক্ষণ নিয়েছে। নতুন করে আরসার নাম যুক্ত হওয়ায় এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

জানা গেছে, ২০২১ সাল থেকে এই জঙ্গি সংগঠনকে সহায়তা প্রদান এবং সামরিক প্রশিক্ষণে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে কেএনএফের ১৪ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, শারক্বীয়ার আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের নেতৃত্বে উগ্রবাদী সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে। সংগঠনে ছয় জন শুরা সদস্য রয়েছেন; যারা দাওয়াতি, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। শুরা সদস্য আবদুল্লাহ মাইমুন দাওয়াতি শাখার প্রধান। গ্রেফতারকৃত মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর সামরিক শাখার প্রধান। এর আগে গ্রেফতারকৃত মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার দ্বিতীয় ব্যক্তি, মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিব অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান, শামীম মাহফুজ প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক এবং ভোলার শায়েখ আলেম সংগঠনটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ জন সদস্যকে কেএনএফের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হয়।

আরসা সদস্যদের ধরিয়ে দিতে পোস্টার

এদিকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরসার শতাধিক সদস্যকে ধরিয়ে দিতে ইতিমধ্যে টেকনাফ ও উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার টানিয়েছে এপিবিএন (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন)। যাদের ধরিয়ে দিতে পুলিশ পোস্টার টানিয়েছে, তারা হলেন—২ নম্বর ক্যাম্পের কমান্ডার মৌলভী আয়াছ, ৭-এর মুছা, সানাউল্লাহ, ২ পূর্ব আরমান, বাইলা, ক্যাম্প ফরিদ, ৬-এর আব্দুল মালেক, আব্দুল হালিম, মাস্টার সাইফ উদ্দিন, ১৭-এর সিরাজ, হাসিম, বালুখালীর মৌলভী হামিদ হোছন, মাস্টার নূর বশর, ক্যাম্প নাশাপ্রু মন্ডুর মৌলভি সেলিম প্রমুখ।

ইত্তেফাক/এমএএম