শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কুমিল্লায় মোহামেডান আবাহনীর ফুটবল লড়াই

আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:২৬

দেশের ফুটবলে জাতীয় দলের অবস্থা ভালো নেই। যাদের হাতে জাতীয় দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল, তারা ব্যর্থতার খবর ছাড়া ভালো কোনো খবর দিতে পারেননি। তার পরও বছরের পর বছর এক হাতেই চলছে ন্যাশনাল টিমস কমিটি। কমিটির কাছে নেই কোনো জবাবদিহি। কেন দেশের ফুটবল রেজাল্ট পাচ্ছে না, তা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তাও নেই। বারবার একই কথা—পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

দেশের ফুটবলে এখন মোহামেডান-আবাহনীরও করুণ দশা চলছে। নতুন নতুন দল এসে মোহামেডান-আবাহনীর রাজত্ব ভেঙে দিয়েছে। অথচ একটা সময় ঘুরেফিরে ফুটবল মাঠে মোহামেডান ও আবাহনী নিয়ে উত্তেজনা দেশ জুড়ে ঢেউ তুলত। তখনকার সংগঠক আর এখনকার সংগঠকদের মধ্যে কত ব্যবধান। তখন মোহামেডান বা আবাহনী হেরে গেলে কর্মকর্তারা বাসায় ঢুকতে পারতেন না। রাস্তায় বের হওয়া কঠিন ছিল। পৃষ্ঠপোষকদের কাছে গেলে তীরবিদ্ধ কথা শুনতে হতো। আর এখন মোহামেডান-আবাহনীর ফুটবল কর্মকর্তারা নির্ভাবনায় চলতে পারছেন। তাদের কাছে কেউ জানতেও চায় না খেলায় এমন হলো কেন। এমনকি ক্লাবও না। একটা ক্লাব চলে সাংগঠনিক শক্তির ওপর ভর করে। এখন মোহামেডান-আবাহনী হয়ে গেছে একজন দুই জন কর্মকর্তানির্ভর। তারা চাইলে ভালো দল হবে, না চাইলে হবে না।

কেউ যদি দুই ক্লাবের কর্মকর্তাদের খোঁজ নিয়ে জানতে পারবেন, ক্লাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কত জন কর্মকর্তা জানেন যে, আজ কুমিল্লায় মোহামেডান-আবাহনী ফুটবল ম্যাচ? শুরু হবে বেলা ৩টায়? কত জন বলতে পারবেন আজ মোহামেডান মাঠে নামবে দ্বিতীয় জয়ের জন্য? আবাহনী চায় চতুর্থ জয়? পয়েন্ট টেবিলের কথাও যদি জানতে চাওয়া হয়, তারা কি কেউ বলতে পারবেন ৬ খেলায় (৩ জয়, ৩ ড্র) ১২ পয়েন্ট নিয়ে আবাহনী আছে দ্বিতীয় স্থানে? আর পাঁচ খেলায় (১ জয়, ৩ ড্র, ১ হার) ৬ পয়েন্ট নিয়ে ৬ নম্বরে রয়েছে মোহামেডান?

এ দুই দলের এমন কিছু সমর্থক রয়েছে, যারা সবকিছু মুখস্থ বলে দেবে। আর দুই দলের কিছু স্যুটেড-বুটেড কর্মকর্তা রয়েছেন, যাদের নজর দেওয়ার সময় নেই, ‘দায়িত্ব দিয়েছি তারা করবে।’ এমনকি এসব কর্মকর্তা দলের খেলাও দেখতে কুমিল্লায় যাবেন না আজ।

এ ধরনের কিছু কর্মকর্তা দলের সত্যিকারের সংগঠকদের কোণঠাসা করে দিয়েছেন। টাকার শক্তির কাছে আসল সংগঠকেরা পিছপা হতে বাধ্য হয়েছেন, বাধ্য হচ্ছেন।

ভালো কোনো ফুটবলার আনবে না। ভালো কোচ আনবে না। কীভাবে নিজেদের দলটা শক্তিশালী করা যায়, সেদিকে ভাবনা নেই। মুখে শোনা যাবে, ওদের মতো টাকা আমরা খরচ করতে পারব না। বসুন্ধরা কিংস দেশের ফুটবলে কত প্রভাব রাখছে। ওদের তুলনায় মোহামেডান-আবাহনী কোটি কোটি সমর্থকনির্ভর দল। এই পুঁজিটাকে নষ্টই করে ফেলেছে নতুন নেতৃত্ব।

পেশাদার ফুটবলে মোহামেডান তো এখনো ট্রফি পায়নি। আর আবাহনী তো হ্যাটট্রিক শিরোপা ঘরে তুলেছে। তার পরও যেদিন হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আবাহনী, সেদিন হাতে গোনা কয়েক জন সমর্থক আবাহনীর গ্যালারিতে বসে ছিল। কোনো উন্মাদনা দেখা গেল না। অথচ ১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৫ সালে যখন প্রথম বিভাগ ফুটবলে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হলো, সেদিনের উত্সবের কথা আজও চোখে লেগে আছে। ঢাকায় ট্রাকভর্তি সমর্থক নিয়ে শোভাযাত্রা হয়েছিল। সেবার মোহামেডানও পালটা দেখিয়ে দিল হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে। ১৯৮৬, ১৯৮৭, ১৯৮৮ লিগ চ্যাম্পিয়ন হলো। ঢাকা স্টেডিয়ামের মশাল গেটে উত্সব হয়েছিল। এলাকায় এলাকায় মোহামেডানের ফুটবলারদের সংবর্ধনা দিতে দেখা গেল।

কর্মকর্তাদের হাতেই শেষ হলে গেছে ক্লাব ফুটবলের সেই জৌলুস।

ইত্তেফাক/জেডএইচ