বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হরিণ ধরে শিকারিচক্র, মাংস বিক্রি অগ্রিম বুকিংয়ে

আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:৩৫

সুন্দরবনে হরিণ শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত এক পক্ষকালের মধ্যে পৃথক ঘটনায় সুন্দরবনে শিকার করে নিয়ে যাওয়ার পথে শিকারিদের কবল থেকে ৩৬ কেজি হরিণের মাংশ, চারটি চামড়া, হরিণ ধরা ফাঁদ ও  বন্দুকের গুলি উদ্ধার করেছে বনরক্ষীরা। আটক হয়েছে পাঁচ হরিণ শিকারি।

বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সুন্দরবনে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকারের জন্য বরগুনার পাথরঘাটার চরদুয়ানী, জ্ঞানপাড়া, শরণখোলার সোনাতলা, পানিরঘাট, মোংলার চাঁদপাই ও খুলনার কয়রা এলাকায় গড়ে উঠেছে  একটি শক্তিশালী শিকারিচক্র। চক্রের শিকারিরা জেলে বেশে মাছের পাস নিয়ে সুন্দরবনের গহীনে রশি দিয়ে তৈরী ফাঁদ পেতে হরিণ ধরছে। পরে তা জবাই করে মাংস বস্তায় ভরে বরফচাপা দিয়ে রাতের আঁধারে বন থেকে ফিরে আসে। পরে গোপনে বিভিন্ন স্থানে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে।

সূত্র আরও জানায়, ক্রেতারা শিকারিদের আগে থেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে বুকিং দিয়ে রাখে। হরিণের এ মাংস চক্রটি রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত সরবরাহ করে থাকে।

অভিযোগ রয়েছে, হরিণ শিকারের বিষয়টি বনবিভাগের অনেক টহলফাঁড়ির বনরক্ষীরা জেনেও না জানার ভান করে থাকেন। শিকারিরা বনের দুবলারচর, কচিখালী, চান্দেশ্বর, কটকা, সুপতি, টিয়ারচর, কোকিলমনি, আন্ধারমানিকসহ দুর্গম বনাঞ্চলে বেশি ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে। শিকারিদের নাম-পরিচয় এলাকায়  অনেকটা ওপেন সিক্রেট। শরণখোলার পানিরঘাট সোনাতলা এলাকার শিকারি তানজের বয়াতী, শহিদুল,নান্না, জাকির মল্লিক, হাবিব হাং ও আলমের নাম মানুষের মুখে মুখে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ জানুয়ারি সুন্দরবনের নীরকমল ফরেস্ট টহলফাঁড়ির বনরক্ষীরা একটি ট্রলার, ২০ কেজি হরিণের মাংস ও ২০ রাউন্ড গুলিসহ হিরো আকন নামে এক শিকারিকে আটক করে। তার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটার তালতলী এলাকায়।

২৪ জানুয়ারি পাথরঘাটার হরিণঘাটা থেকে কোস্টগার্ড দুইটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করে।

২৩ জানুয়ারি শরণখোলা স্টেশনের বনরক্ষীরা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের তানজের বয়াতীর বাড়ি থেকে দুইটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

২২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সুন্দরবনের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের বনরক্ষীরা ডিমেরচর থেকে ১৫-২০ কেজি হরিণের মাংসসহ দুই শিকারিকে আটক করে। আটক শিকারিরা হলেন, পাথরঘাটার পদ্মা গ্রামের ইদ্রিস ও নিজাম। এ কাজে তারা ট্রলার ব্যবহার করতেন।

এর আগে ১৮ জানুয়ারি দুবলারচরের নারিকেলবাড়ীয়া থেকে বনরক্ষীরা ৫ কেজি হরিণের মাংসহ দুইজনকে আটক করে আদালতে চালান দিয়েছে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও)  মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, সুন্দরবনে আগের মতো চোরাশিকারিদের তৎপরতা নেই। তারপরেও হরিণ শিকার বন্ধে বনরক্ষীরা সার্বক্ষণিক টহল ও নজরদারি রাখছেন। নিয়মিত টহলের কারণেই হরিণ শিকারিরা আটক হচ্ছে।

ইত্তেফাক/এসকে