সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

শেষ ফাইনালে স্বপ্ন ভঙ্গ, অশ্রুসিক্ত চোখে নিলেন বিদায়

আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:০৫

বয়স ৩৬ পেরিয়েছে সানিয়া মির্জার, ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে মেলবোর্নে রড লেভার অ্যারেনা থেকে নিজের যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। সেই মেলবোর্নেই গতকাল নিজের টেনিস ক্যারিয়ারের শেষবারের মতো মিক্সড ডাবলসের ফাইনালে ব্রাজিলের স্টেফানি-মাতোস জুটির বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন সানিয়া। তবে শেষটা আর সুখকর হয়নি তার। বিদায় বেলায় চোখের জল বাঁধ মানল না ভারতীয় টেনিস সুন্দরীর।

শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মিক্সড ডাবলসের ফাইনালে ব্রাজিলীয় জুটির কাছে হারতে হয়েছে সানিয়া মির্জা ও রোহন বোপান্না জুটিকে। খেলার ফল ৬-৭ (২-৭), ২-৬। ক্যারিয়ারের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামে রানার্স-আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হলেও প্রাপ্তির ভান্ডার কিন্তু কম নয় এ ভারতীয় টেনিস সুন্দরীর। ৪ বছরের ছেলের সামনে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল ও ক্যারিয়ারের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাই আলাদা ‘মা’ সানিয়ার কাছে। গোটা ম্যাচ জুড়ে ৪ বছরের ইজহান মির্জা মালিক সমর্থন করে গেলেন তার মাকে। পরিবারের সকলেই উপস্থিত ছিল সেখানে, শুধু বাদ ছিলেন স্বামী শোয়েব মালিক। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলছেন তিনি।

এদিকে সানিয়া মির্জাকে রাজকীয়ভাবেই বিদায় দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন কর্তৃপক্ষ। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরুর আগে পুরো রড লেভার অ্যারেনা হর্ষধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে। পেশাদার কোর্টকে বিদায় জানাতে গিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই আবেগপ্রবণ হয়ে যান সানিয়া। কান্নায় ভিজে ওঠে তার চোখ। বিদায়ী বার্তায় সানিয়া বলেন, ‘এটা কষ্টের নয়, আনন্দের কান্না। এই মুহূর্তটা আমি ব্রাজিলের জুটির থেকে কেড়ে নিতে চাই না। তোমরা দারুণ খেলেছ।’

এ সময় সানিয়া আরো বলেন, ‘আমার পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল এই মেলবোর্নে। যখন ২০০৫ সালে সেরেনা উইলিয়ামসের বিপক্ষে তৃতীয় রাউন্ডে খেলতে নেমেছিলাম। আমার বয়স ছিল ১৮। বারবার এই কোর্টে খেলার সুযোগ পাওয়া, কিছু টুর্নামেন্ট জিততে পারা আমার জন্য সম্মানের। রড লেভার অ্যারেনা আমার জীবনের বিশেষ কিছু। চাইলে আরো গোটা দুয়েক প্রতিযোগিতা খেলতেই পারতাম। গ্র্যান্ড স্ল্যাম ক্যারিয়ার শেষ করার জন্য এর থেকে ভালো জায়গা আমার কাছে নেই। মনে হয়েছে, আমি বাড়িতে আছি। এমন অনুভূতি উপহার দেওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ।’

সব মিলিয়ে বিদায়ের ক্ষণটা সানিয়ার জন্য অন্য রকমই ছিল। তবে এটা আরো রঙিন এবং মধুর হতে পারত, যদি ফাইনাল জিতে ট্রফি হাতে নিয়ে বলতে পারতেন ‘বিদায়, গ্র্যান্ড স্ল্যাম’। এদিন ফাইনালের শুরুটা খুব একটা খারাপ করেননি সানিয়া ও বোপান্না জুটি। ম্যাচে নিজেদের নিয়ন্ত্রণেও রেখেছিলেন। আবার একসময় এগিয়েও গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু বোপান্নার একটি ভুলে ব্রাজিলিয়ান জুটি লুইসা স্টেফানি এবং রাফায়েল মাতোস খেলাটিকে টেনে নিয়ে যান টাইব্রেকার অবধি।

সেট পয়েন্ট থাকা সত্ত্বেও খেলাটি টাইব্রেকার অবধি গড়ানোয় কিছুটা মানসিক থাকার কারণ দুজনেই। এরপর সানিয়া দুটি সহজ ওভারহেড নেটে মারবার পর তাদের হাত থেকে খেলা পুরোপুরি বেরিয়ে যায় এবং ৭-২ ফলে টাইব্রেকারটি জিতে নেয় ব্রাজিলিয়ান জুটি। এরপর দ্বিতীয় সেটে রোহান এবং সানিয়াকে দাঁড়াতে দেননি তারা। ২-৬ ফলে সেটটি জিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মিক্সড ডাবলস জিতে নেয় স্টেফানি ও মাতোস।

এর আগে এ টুর্নামেন্টের মেয়েদের ডাবল থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডেই ছিটকে গিয়েছিলেন সানিয়া। কিন্তু মিক্সড ডাবলসে তিনি যথেষ্ট ভালো পারফর্ম করেছিলেন। ক্যারিয়ারের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম ম্যাচেও তার কিছু রিটার্ন শট দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে এখনো ফুরিয়ে যাননি তিনি। এটা ছিল তার কেরিয়ারের ১১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল, যার মধ্যে ৬টিতেই জয় পেয়েছেন তিনি। এছাড়া টানা ৯১ সপ্তাহ ডাবলস র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানে থাকার রেকর্ড আছে তার।

এদিকে সানিয়া মির্জা সিংগেলস খেলা ছেড়ে দিয়েছিলেন ২০১৩ সালে। সিংগলসে তার শীর্ষ র‍্যাংক ছিল ২৭। তবে ডাবলস ও মিক্সড ডাবলসেই বেশি সফল সানিয়া। সানিয়া মির্জা প্রায় ৯১ সপ্তাহ ধরে ডাবলসে এক নম্বরে ছিলেন। ২০১৫ সালে সানিয়া মির্জা-মার্টিনা হিঙ্গিস জুটি বেঁধে টানা ৪৪টি ম্যাচ জিতেছিলেন। ভারতের একমাত্র মহিলা টেনিস খেলোয়ার হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন সানিয়া। তার ঝুলিতে রয়েছে তিনটি ডাবলস ও তিনটি মিক্সড ডাবলস। মিক্সড ডাবলসে ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ২০১২ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেন এবং ২০১৪ সালে ইউএস ওপেন জিতেছিলেন মির্জা। মহিলাদের ডাবলসে, ২০১৫ সালে উইম্বলডন এবং ইউএস ওপেন, ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের খেতাব জিতেছিলেন তিনি। এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসেও পদক জিতেছেন সানিয়া।

গ্র্যান্ড স্ল্যামে আর না নামলেও ফেব্রুয়ারি মাসে আরো একটি টুর্নামেন্টে খেলে টেনিস থেকে পুরোপুরি অবসর নেবেন সানিয়া। দুবাইতে ‘ডব্লিউটিএ ১০০০’ ইভেন্টটি হবে তার যাত্রা পথের শেষ অধ্যায়।

ইত্তেফাক/এসএস