মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৩ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

ভাইস চেয়ারম্যানের সরকারি অফিসে ফেনসিডিল বেচাকেনা!

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:০৮

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিরু তার সরকারি অফিসে বসে নিয়মিত মাদক সেবন করেন, অনেকজনকে মাদক সেবন করান- এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল অনেক দিন থেকেই। এবার সেই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে হাতে আসা একটি ভিডিও থেকে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ভাইস চেয়ারম্যানের ফেনসিডিল কেনাবেচার দৃশ্য। এলাকার এক চিহ্নত মাদক কারবারির কাছ থেকে মিরুর ফেনসিডিলের বোতল নেওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের নতুন ভবনের নিচতলায় তার অফিসকক্ষ। ওই ভবনেই বসেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ অন্য দফতরের কর্মকর্তারা। ফেনসিডিলের মতো মাদক নিয়ে নির্দিষ্ট সরবরাহকারী সরাসরি ওই ভবনে থাকা ভাইস চেয়ারম্যানের কক্ষে গিয়ে তার হাতে তুলে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই কক্ষে ভাইস চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ মাদকাসক্তদেরও কেউ কেউ মাদক সেবন করে থাকেন বলে জানা গেছে।

মোবাইলে ধারণ করা দুই মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, আনোয়ার হোসেন মিরু নিজের চেয়ার থেকে উঠে টয়লেটে প্রবেশ করেন। টেবিলের অন্য প্রান্তে তখন একজন পুরুষ ও একজন নারী বসে আছেন। টয়লেট থেকে বের হয়ে তিনি সোজা চলে আসেন টেবিল থেকে কিছুটা দূরে দর্শনার্থীদের জন্য থাকা সোফার কাছে। সেখানে বসা লুঙ্গি পরিহিত এক লোককে দেখা যায়। কিছু সময় পর লুঙ্গির ভাঁজে লুকিয়ে রাখা একটি ফেনসিডিলের বোতল মিরুর হাতে তুলে দেন। মিরু কিছুটা আড়াল করে সেই বোতল নিয়ে আবারও ঢুকে পড়েন টয়লেটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাইস চেয়ারম্যান মিরুকে যিনি ফেনসিডিলের বোতল দিয়েছেন, তিনি উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বাড়াইপাড়া এলাকার কানিপাড়া গ্রামের জাফর আলীর ছেলে ইউসুফ (৪২)। তার নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

তবে মাদক কারবারী ইউসুফ এই প্রবিবেদকের কাছে মুঠোফোনে বলেন, 'আমার নামে শুধু ১টা মাদক মামলা রয়েছে।'

সাংবাদিকদের কাছে আসা ভিডিও ফুটেজ সম্পর্কে বলেন, 'আমি ভাইস চেয়ারম্যান মিরুর কাছে টাকা পাই। সেই টাকা আনতে গিয়েছিলাম।'

ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আপনি অনেকটা লুকিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান মিরুর হাতে ফেনসিডিল তুলে দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, 'না, উনি (ভাইস চেয়ারম্যান) আমার কাছে সিগারেট খাওয়ার জন্য ৫০ টাকা নিয়েছিলেন।'

সরকারি অফিসে বসে মাদক ক্রয় এবং সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যন আনোয়ার হোসেন মিরু বলেন, 'না আমি মাদক নেইনি।'

ইউসুফ নামে এক মাদক কারবারি আপনাকে অফিসে এসে ফেনসিডিল দিয়েছেন সেই ভিডিও আছে- এমন প্রশ্নে মিরু বলেন, 'না, ও (ইউসুফ) আমার কাছে টাকা পায়। সেই টাকার জন্য সে আমার কাছে এসেছিল।'

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, মাদক সেবন এমনিতেই অপরাধ। আর সেটা যদি অফিসকক্ষে বসে, সেটা আরও বেশি অপরাধ। যেহেতু ভাইস চেয়ারম্যানরা উপজেলা চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে, সেহেতু তার অপরাধ প্রমাণ হলে উপজেলা চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নেবেন।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন বলেন, যদি সত্যি তিনি অফিসে বসে মাদক সেবন করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এসকে