শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্য ফুলতলা, ঘটছে একের পর হত্যা

আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:০২

গাছ-গাছালিতে ঠাসা, সবুজে ঘেরা শান্ত, সুন্দর এক নিভৃত পল্লি খুলনার ফুলতলা উপজেলা। সৌন্দর্যেভরা এই উপজেলাটিই হয়ে উঠেছে দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্য। কিছুদিন বিরতি দিয়ে এখানে ঘটছে একের পর এক হত্যাকাণ্ড। দুর্বৃত্তদের অবাধ বিচরণে এ জনপদের মানুষ সবসময় আতঙ্কে থাকে।

গত সোমবার সকালে উপজেলা সদরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মিলন ফকির নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত মিলনের স্ত্রী রাশিদা বেগম অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ফুলতলা থানায় হত্যা মামলা করেছেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর দুদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া মিলন ফকিরের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব মোটিভ খুঁজে দেখা হচ্ছে।

গত বছরের ৩১ আগস্ট রাত ৩টার দিকে দুর্বৃত্তরা সাবেক জাতীয় অ্যাথলেট এম কামরুজ্জামানকে গাড়াখোলার পোড়া বটতলা এলাকা থেকে জিম্মি করে। পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাথা ও চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ সেপ্টেম্বর রাতে তার মৃত্যু ঘটে। ঐ ঘটনার ১৭ দিন পর নিহত কামরুজ্জামানের ভাই আনারুল ইসলাম মোল্লা বাদী হয়ে সাত জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো দুই-তিন জনকে আসামি করে ফুলতলায় থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

এছাড়া ৫ জুলাই পুলিশ উপজেলার দামোদর ঋষিপাড়ার একটি বাড়ি থেকে শাহজাহান ভুঁইয়া নামে এক বেকারি মালিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। শাহজাহান ভুঁইয়ার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামপুর গ্রামে। তিনি দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ফুলতলা উপজেলা সদরে বেকারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

একই বছরের ১৮ মে রাতে পুলিশ ফুলতলা ইউনিয়নের রাড়ীপাড়া গ্রামের ভাড়া বাড়ি থেকে হাত বাঁধা অবস্থায় মাসুদ রানা নামে এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাসুদ রানার বাড়ি যশোর শহরে। ১ এপ্রিল প্রকাশ্য দিবালোকে ফুলতলা কলেজ ক্যাম্পাসে সৈয়দ আলিফ রোহান নামে এক কলেজছাত্রকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এ ঘটনায় পাঁচ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো চার/পাঁচ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এর আগে ২৬ জানুয়ারি রাতে উপজেলার উত্তরডিহি গ্রামে মুসলিমা নামে এক কিশোরীকে গণধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

এছাড়া ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ফুলতলা গরুহাট এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে হেমায়েত হোসেন লিপু নামে এক যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত লিপুর ভাই হেদায়েত হোসেন লিটু বাদী হয়ে আট জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ৯ মাস তদন্তের পর পুলিশ ছয় জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। এভাবে ফুলতলা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠু, তার ভাই দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আবু সাঈদ বাদল, রাজু শেখ, হেলালসহ আরো বেশ কয়েক জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। প্রতিটি হত্যার পর বেশ কিছুদিন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোর তৎপরতা দেখা গেলেও সময়ের ব্যবধানে তা স্থিমিত হয়ে পড়ে। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা আবারও তাদের খোলস ছেড়ে প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসে।

এ প্রসঙ্গে খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, মিলন ফকির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রত্যেকটি দিক খুঁজে দেখছি। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদও অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার চরমপন্থি দলের সদস্য ও সন্ত্রাসীদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অপরাধীদের যে কোনো মূল্যে আইনের আওতায় আনা হবে।

 

ইত্তেফাক/ইআ