শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন

সাত মাসে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড ৯২০ কোটি ডলার বিক্রি

আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:৩০

চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৯২০ কোটি বা ৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ইতিহাসে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত পরিমাণ ডলার বিক্রি হয়নি। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময় রিজার্ভ থেকে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন বা ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, দেশের মধ্যে ডলারের তীব্র সংকট চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ডলারের এ সংকট কাটাতে উচ্চাভিলাষী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত পাশাপাশি বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও সংকট কাটছে না। এ কারণে জরুরি আমদানি দায় মেটাতেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবুও আটকে থাকছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। ডলার সংকটে আমদানিকারকদের চাহিদা মেটাতে পারছে না অধিকাংশ ব্যাংক। এসব সমস্যার সমাধান দিতে অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৯২০ কোটি বা ৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেন মুখপাত্র।

সংবাদ সম্মেলনে সদ্য শেষ হওয়া জানুয়ারি মাসের এলসির তথ্য বিষয়ে মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আসন্ন রমজানে পাঁচ পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজন মতো এসব পণ্যে এলসি খোলা হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলসি না খুলতে পারার খবর এসেছে। আমরা মনে করছি, পবিত্র রমজান মাসে চিনি, ভোজ্য  তেল, খেজুর, পেঁয়াজ ও ছোলার কোনো ঘাটতি হবে না। গত বছরের প্রথম মাসে (জানুয়ারি) ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন চিনির এলসি খোলা হয়েছিল। চলতি বছর একই মাসে চিনির এলসি খোলা হয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ মেট্রিক টন। এ বছর জানুয়ারিতে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৩ মেট্রিক টন তেলের এলসি খোলা হয়েছে, যা গত ২০২২ সালের জানুয়ারিতে খোলা হয়েছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন। চলতি বছর জানুয়ারিতে পেঁয়াজের এলসি খোলা হয়েছে ৪২ হাজার ৫৬২ মেট্রিক টন, যা গত বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ২২৫ মেট্রিক টন।

এছাড়াও চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছোলার এলসি খোলা হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৬৬ মেট্রিক টন। গত বছরের একই সময়ে ছোলার এলসি খোলা হয়েছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে খেজুর আমদানিতে ২৯ হাজার ৪৮১ মেট্রিক টন এলসি খোলা হয়েছিল, যা গত বছরের জানুয়ারি মাসে খোলা হয়েছিল ১৬ হাজার ৪৯৮ মেট্রিক টন। আসন্ন রোজার আগেই আমাদের এসব পণ্য চলে আসবে। এজন্য কোনো নীতিসহায়তার প্রয়োজন হলে সেটাও দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে সংকট দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে মেজবাউল হক বলেন, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও হচ্ছে প্রয়োজন মতো। গত নভেম্বর থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার করে রপ্তানি হচ্ছে। আমাদের রেমিট্যান্স ও রপ্তানির মিলে ৪৪ বিলিয়ন আয় হয়েছে আর এলসিতে আমদানির দায় পরিশোধ হয়েছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার। আমাদের এক্সপোর্ট বা রপ্তানিতে মিসম্যাস আছে, যেটা ১৮০ দিনে আয় আসে তখন সমন্বয় হয়।

তিনি বলেন, প্রবাসী আয় বেড়েছে, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। অন্যদিকে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানির নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পুরোনো আমদানি ব্যয় নির্বাহ করতে এখনো ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি থাকলেও শিগগিরই এ ঘাটতি থাকবে না। এতে ডলারের সংকট দূর হবে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধ না হলে পরিস্থিতি পুরোপুরি কখন নিয়ন্ত্রণে আসবে বলা যাবে না।

কিছু ব্যবসায়ী রোজায় ব্যবহৃত পণ্য আমদানি করতে এলসি খুলতে পারছে না, ব্যাংক এলসি খুলতে রাজি হচ্ছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে মেজবা উল হক বলেন, মোট এলসি খোলার চিত্র সে কথা বলছে না।  হ্যাঁ, এমন হতে পারে কোনো ব্যাংক হয়তো খুলছে না। কিন্তু অন্য ব্যাংক বেশি খুলছে। জরুরি প্রয়োজনে এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সহায়তা দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ইত্তেফাক/এমএএম