বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ১৬ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

তবুও ইতিহাস হয়ে থাকবেন

আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৪৩

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনই শুধু নয়, এশিয়ার ক্রীড়াঙ্গন থেকে প্রথম কোনো নারী ফিফার সদস্য হয়েছিলেন। পরপর দুই বার ফিফার নির্বাহী কমিটির সদস্য হয়েছিলেন মাহফুজা আক্তার কিরণ। কিন্তু এবার তিনি তৃতীয় বার নির্বাচিত হতে পারলেন না। তৃতীয় মেয়াদে হ্যাটট্রিক করতে পারলেন না। ফিফার নির্বাচনে হেরে গেলেও এএফসির চেয়ারে নির্বাচিত হয়ে বসেছেন কিরণ।

নির্বাচনে কত কিছুই তো হয়। পর্দার আড়ালেও অনেক পরিকল্পনা থাকে। অন্তরালের নাটকের সঙ্গে সব সময় পেরে ওঠা যায় না। এটা আন্তর্জাতিক সংগঠন। পৃথিবীর বাঘা বাঘা সব লোকবলের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অংশগ্রহণ থাকে, মতামত থাকে। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের লড়াইয়ের প্রভাব পড়ে ফিফার মতো বড় সংগঠনের নির্বাচনে। কেউ জোটবদ্ধ হতে গিয়ে পছন্দের যোগ্য সংগঠককে ভুলে যান। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের নির্বাচনেই তো দেখা গেছে জোটের লড়াইয়ে কত মেধাবী সংগঠককে বিদায় নিতে হয়েছে।

 কিরণ গত দুই মেয়াদে ফিফার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে ছিলেন। বিশ্বকাপের ভেন্যুর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিফা ও এএফসির নানা কাজে কিরণের উপস্থিতি দেখেছেন আন্তর্জাতিক ফুটবল সংগঠকেরা। শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও কাজের ক্লান্তি খুঁজে পায়নি ফিফা বস। ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো সব সময় কিরণকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন এবং তার কাজের প্রশংসাও করেছেন। কাতার বিশ্বকাপে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফিফা অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল। যত দূর জানা গেছে, ফিফা কিরণকে যেসব কাজের দায়িত্ব দিয়েছিল, তা ভালোভাবে শেষ করার চেষ্টা করেছেন। এখন বাংলাদেশের ফুটবলের যে র‍্যাংকিং, তাতে এ দেশের একজন নারী সংগঠকের ফিফার মতো সংগঠনের টেবিলে গুরুত্বপূর্ণ চেয়ার পাওয়ার কথাই নয়। সেখানে একজন কিরণ দুই দুই বার ফিফার সদস্য হয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মতো শক্তিশালী প্রার্থীদের নিচে নামিয়ে দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কর্মদক্ষতার জোরে।

গত বছর নেপালের নারী সাফে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। নেপাল থেকে বাংলার নারী ফুটবলাররা দেশে ফিরে এলে পুরো বাংলাদেশে যেভাবে সাড়া পড়েছিল, তার খবর ফুটবল দুনিয়া জেনেছে। রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল। ফিফাও জেনেছিল এই আনন্দের খবর। বিভিন্ন দেশের ফুটবল কর্মকর্তা কিরণকে ফোনে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন। তার পরও নির্বাচন ভিন্ন কথা। এখানে অনেক রকম খেলা হয়, যে খেলায় পেরে ওঠেননি কিরণ। তার প্রমাণ নির্বাচনি ফলাফল। কিরণ ৩৬-৭ ভোটে হেরেছেন লাওসের কানিয়া কিওমানির কাছে। এত ভালো কাজ করার পর নির্বাচনে এত পার্থক্য হওয়ার কথা না। ভোটের পার্থক্য বলে দেয়, এবার নির্বাচনি মঞ্চে ওঠার আগেই ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল।

কিরণ ফিফায় না থাকলেও থাকবেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে। ফিফায় হেরে গেলেও থাকবেন ফিফার প্রয়োজনে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন। নারীর সাফল্য শুনেও খুশি হন। বাংলাদেশের একজন নারী ফিফার টেবিলে বসে এই দেশকে গৌরব এনে দিয়েছেন। নারীদের সম্মান বাড়িয়েছেন। অন্যান্য নারীর জন্য এটা প্রেরণা। বাংলাদেশ থেকে আর কোনো নারী ফিফার টেবিলে বসতে পারবেন কি না, নিশ্চয়তা নেই। তবে মাহফুজা আক্তার কিরণ সারা জীবন ইতিহাস হয়ে থাকবেন।

 

ইত্তেফাক/জেডএইচ