বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

১১ গ্রামে বাঘ আতঙ্ক, লোকালয়ে পায়ের ছাপ

আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:৪৬

সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের এগারো গ্রামের মানুষকে এখন বাঘ আতঙ্ক তাড়া করছে ফিরছে। বাঘের আক্রমণের শিকার হচ্ছে গরু-মহিষ। সন্ধ্যা হলেই গ্রামের রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। অপরদিকে, বাঘসহ বন্যপ্রাণীর  লোকালয়ে প্রবেশ ঠেকাতে বনের পাশে নাইলনের ফেন্সিংবেড়া নির্মাণ করবে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পূর্ব সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা, পানিরঘাট, সোনাতলা, রসুলপুর, দক্ষিণ রাজাপুর, উত্তর রাজাপুর, পশ্চিমরাজাপুর, টগড়াবাড়ী, ধানসাগর এবং মোরেলগঞ্জের গুলিশাখালী, আমুরবুনিয়াসহ আশেপাশের গ্রামের মানুষকে প্রতিনিয়ত বাঘ আতঙ্ক তাড়া করছে ফিরছে। সন্ধ্যা হলেই গ্রামগুলোতে নেমে আসে সুনশান নীরবতা। মানুষের চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। 

এলাকার লোকজন দেখিয়ে দিচ্ছে ছোট খাল পার হয়ে আসা বাঘের ছাপ। ছবি: ইত্তেফাক

সোনাতলা গ্রামের সাচ্চু হাওলাদার, দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের জাহিদুল হাওলাদার, জুয়েল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন তালুকদার, উত্তর রাজাপুর গ্রামের মাসুম হাওলাদার, ধানসাগর টগড়াবাড়ী এলাকার তোফাজ্জেল হোসেন, আমিন চৌকিদার, বলেন, বনের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ভোলা নদী ভরাট হয়ে সরু খালে পরিণত হওয়ায় প্রায়ই রাতে বাঘ সহজেই লোকালয়ে প্রবেশ করছে। বাঘ লোকালয়ে এসে গরু-ছাগল মারছে। 

ক্রমেই খাল ছোট হওয়ার কারণে সহজেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে বাঘ। ছবি: ইত্তেফাক

সম্প্রতি দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে একটি ছাগল ও ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ধানসাগর গ্রামের নুরুজ্জামান খানের বাড়িতে বাঘ এসে একটি গরু মেরে ফেলেছে। বাঘের ভয়ে অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটে বলে জানালেন ঐ গ্রামবাসীরা।

 

১ নম্বর ধানসাগর ইউনিয়নের ধানসাগর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, লোকালয়ের কাছে বাঘের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা আতঙ্কে রাতের বেলা গ্রামে পাহারায় বের হতে হিমশিম খাই।

লোকালয়ের খালপাড়ে বাঘের পায়ের ছাপ। ছবি: ইত্তেফাক

১ নম্বর ধানসাগর ইউপি চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম টিপু বলেন, ধানসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর ও ধানসাগর টগড়াবাড়ী এলাকায় বাঘের আনাগোনায় ঐ এলাকার মানুষ সর্বদা বাঘ আতঙ্গে থাকেন বলে চেয়ারম্যান টিপু জানিয়েছেন। 

শরনখোলার যে খাল পার হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে বাঘ। ছবি: ইত্তেফাক

সুন্দরবন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার ইত্তেফাককে বলেন, ৩৬ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে তিন বছর মেয়াদী সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বন্যপ্রাণী ও বন সুরক্ষায় কয়েকটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাঘ গণনা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাসে বনের প্রাণীকূলকে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার জন্য সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে উঁচুটিলা নির্মাণ, লোকালয়ে বন্যপ্রাণী প্রবেশ ঠেকাতে বনের পাশে নাইলনের ফেন্সীংবেড়া দেওয়াসহ আরও অনেক কাজ। ইতিমধ্যে বাঘ গণনার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নাইলনের ফেন্সিংবেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। এই বেড়ার কাজ শেষ হলে লোকালয়ে আর বন্যপ্রাণী প্রবেশ করতে পারবে না বলে বন সংরক্ষক জানিয়েছেন।

ইত্তেফাক/পিও