৩৫ বছর আগে হয়েছিল হেরোইন পাচারের মামলা। রংপুরের সেই মামলায় জামিন না পাওয়ায় ভোগ করতে হয়েছে পুরো সাজা। সাজা ভোগ শেষে ৩২ বছর পর নিষ্পত্তি হলো আপিল। আপিলের রায়ে তাকে বেকসুর খালাস দিয়ে নির্দোষ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরো সাজা ভোগ করায় আপিলকারী আর উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হননি। ফলে আপিল নিষ্পত্তি হতে লেগেছে তিন দশকের বেশি সময়। যদি আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় তিনি জামিন পেতেন তাহলে তাকে পুরো সাজা ভোগ করতে হতো না।
মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৮৮ সালের ২৭ আগস্ট রাতে অভিযান চালিয়ে রংপুর বাস টার্মিনাল থেকে ১০ গ্রাম হেরোইনসহ রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে সিআইডি। আসামির শরীর তল্লাশি করে কোমরে গুজা প্লাস্টিকের প্যাকেট হতে দুই পুরিয়া হেরোইন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(বি), শুল্ক আইনের ১৫৬(৮) ও বিপজ্জনক ওষুধ আইনের ১৪ এবং অধ্যাদেশ ৪০(৪) ধারায় মামলা করে। মামলার তদন্ত শেষে ১৯৮৯ সালের ২১ মার্চ চার্জশিট দেয় সিআইডি। দেওয়া হয় কেমিক্যাল রিপোর্ট। যাতে হেরোইনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
চার্জশিটে বলা হয়, সৈয়দপুর হতে গোপনে হেরোইন ক্রয় করে রংপুরে এনে বিক্রয় করত আসামি। ফলে রংপুর শহরের বহু যুবক হেরোইন আসক্ত হয়ে বিপথে যাচ্ছে। চার্জশিট আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে শুধু বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(বি) ধারায় অভিযোগ গঠন করে আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে পাঁচ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য, জেরা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন এবং আসামির আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে ১৯৯০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেন। রায়ে জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরো তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন রংপুরের চোরাচালান রোধ সম্পর্কিত ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রহমান পাটোয়ারী।
এই রায়ের বিরুদ্ধে ঐ বছরই বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩০ ধারায় আপিল করেন আসামি। রংপুরে তৎকালীন হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চে আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় চান জামিন। কিন্তু হাইকোর্ট আসামির জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়। ফলে তাকে পুরো সাত বছর সাজা খাটতে হয়। সাজাভোগের পর আপিলকারী শুনানির উদ্যোগ না নেওয়ায় ঐ আপিল তিন দশক ধরে হাইকোর্টের আপিল শাখায় পড়ে ছিল। পুরোনো আপিল নিষ্পত্তির উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্প্রতি তা পাঠানো হয় হাইকোর্ট বেঞ্চে।
গত জানুয়ারি মাসে ঐ আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ আপিলকারীর আপিল গ্রহণ করে তাকে খালাস দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে এই মামলা পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এজাহারে উদ্ধারকৃত হেরোইনের পরিমাণ উল্লেখ করা হয় ১০ গ্রাম। কিন্তু মামলার নথিতে (প্রদর্শনী) জব্দকৃত হেরোইনের পরিমাণ উল্লেখ করা হয় ৮ দশমিক ৬ গ্রাম। এজাহার ও চার্জশিটে উদ্ধারকৃত হেরোইনের পরিমাণের তারতম্যের কারণে ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় আদালত আপিলকারীকে খালাস দিয়েছেন।