শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

টানা পার্টির লাগাম টানতে পারছে না পুলিশ

আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:০২

২৯ জানুয়ারি, রবিবার। সন্ধ্যার পর অফিস থেকে ঘরমুখো মানুষের ভিড় যানবাহনে। কাওরানবাজার সার্কফোয়ারা মোড়ের চার রাস্তার সবমুখেই প্রচণ্ড যানজট। ফার্মগেটের দিক থেকে কাওরানবাজারমুখী সব যানবাহন থেমে রয়েছে। সদরঘাটমুখী বিহঙ্গ পরিবহনের থেমে থাকা একটি বাসের জানালার পাশের সিটে বসে আনমনে মোবাইল চাপছেন এক যুবক। বাসের জানালা বন্ধ। হঠাৎ বাইর থেকে জানালা টান দিয়ে খুলে ছোঁ মেরে মোবাইল নিয়ে চম্পট দেয় অল্প বয়সি এক তরুণ। এ ঘটনার দুদিন আগে একইভাবে মহাখালী এলাকায় টানাপার্টির কবলে পড়েন এক সংবাদকর্মী। শুধু এ দুটি ঘটনাই নয়। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীতে অন্তত শতাধিক ব্যক্তি টানাপার্টির হেনস্তার শিকার হয়ে মূল্যবান জিনিস হারাচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ও ভ্যানিটি ব্যাগ খোয়া যাচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, চলন্ত বাসে অথবা প্রাইভেটকারে এমন ঘটনা ঘটছে বলে সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। এসব ঘটনার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলা করতে অনীহা ভুক্তভোগীদের। অভিযোগ থাকে না বলে পুলিশও আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। তবে কোনো ভুক্তভোগী থানায় গেলে পুলিশের কাছ থেকে আইনের ব্যাখ্যা শোনার পর মামলা করার আগ্রহ তিনি হারিয়ে ফেলেন। তখন ভুক্তভোগী অগত্যা হারিয়ে গেছে মর্মে জিডি করেন। এ ধরনের একাধিক অভিযোগের পর মাঠে নেমেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা অন্তত দুই শতাধিক টানাপার্টির সদস্যকে শনাক্ত করেছে। এসব সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, মানুষ যেমন পেশা বদল করে, ঠিক অপরাধীরাও তাদের পেশা বদল করে। ছিঁচকে চোর থেকে এখন অনেকে টানাপার্টি ও মলম পার্টিতে নাম লেখিয়েছে। এরা সাধারণত যানজটের সময়কে বেছে নিয়ে অপরাধ কর্ম করে থাকে। বিশেষ করে যানজটে পড়া ব্যক্তিরা এ সময় বাস অথবা প্রাইভেটকারে বসে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এই সুযোগে হঠাত্ করে জানালা দিয়ে ছোঁ মেরে মোবাইল নিয়ে যায়। আবার অনেক সময় সিএনজি চালিত অটোরিকশার ছাদের প্লাস্টিক কেটেও গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব অপরাধীদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুতই অপরাধীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, বাস টার্মিনাল বা বাসস্ট্যান্ডকেন্দ্রিক এসব চক্রের তত্পরতা বেশি। চক্রে অন্তত দুই শতাধিক সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে নাটের গুরু ১০ থেকে ১৫ জন। যারা চক্রের সদস্যদের লালনপালন করেন এবং কমিশন পান। বিপদে পড়লে তারাই এদের জেল থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব নেন। নাটের গুরুদের নামের তালিকা পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তা প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।

জানা গেছে, রাজধানীতে দুই ধরনের টানা পার্টির সদস্য রয়েছে। এদের মধ্যে একটি গ্রুপ ভোর রাতে তত্পর থাকে। তারা প্রাইভেটকার অথবা মটরসাইকেলযোগে এসে রিকশা আরোহী যাত্রীদের ব্যাগ টান দিয়ে দ্রুত সটকে পড়েন। আবার অন্য একটি গ্রুপ রয়েছে যারা কর্মস্থলে যাওয়া এবং বাসায় ফেরার সময়কে টার্গেট করেন। যানজটের সময়ে তারা জানালা দিয়ে ছোঁ মেরে মোবাইল ও ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে যায়। এই গ্রুপটির সদস্যরাও আবার অবসর সময়ে টার্মিনালে তত্পর থাকে। ঢাকায় আগন্তুকদের টার্গেট করে বাসে ওঠার আগ মুহূর্তে ছোঁ মেরে মূল্যবান মালামাল নিয়ে চোখের নিমিষে চম্পট দেয়। তাদের রক্ষা করার জন্য আলাদা একটি গ্রুপ সক্রিয় থাকে। কোনো কারণে বিপদের আঁচ পেলে তারাই সামনে হাজির হয়ে যায়। এরপর লোক দেখানো ধাওয়া দেয় টানা পার্টির সদস্যদের। মূলত ঐ ধাওয়া দেওয়ার অর্থ সাধারণ জনগণকে পেছনে ফেলে তারা নিজেরাই সামনে চলে আসে। আর এই ফাঁকে নিরাপদ স্থানে চলে যায় টানা পার্টির সদস্য। অনেক সময় চোখের নিমিষে টেনে নেওয়া মোবাইল ফোন অথবা মূল্যবান জিনিস অন্য সদস্যের হাতে হাতবদল করে ফেলে।

ইত্তেফাক/ইআ