`সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দেশের সব ইউনিয়নে পদযাত্রার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। একই দিন সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়েও ‘বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও সহিংসতার প্রতিবাদে’ শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা উপস্থিত থাকবেন। আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ে এই ‘শান্তি সমাবেশ’ সফল করতে ইতিমধ্যে ৪০টি জেলায় ৫৩ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। আর যেসব জেলায় কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন না সেসব জেলার নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করতে বলা হয়েছে।
গত শনিবার নয়াপল্টনে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এবার ইউনিয়নে পদযাত্রার পর ধীরে ধীরে উপজেলা, জেলা ও মহানগরে হবে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কর্মসূচি দিয়ে বর্তমান সরকারের ক্ষমতার মসনদ জনগণ দখল করে নেবে। জনগণের সরকার গঠন করবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূলের কর্মসূচিতে দলের সব নেতার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভে, অভিমানে দূরে থাকা নেতাকর্মী কিংবা সমর্থকদেরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। অতীতে বিএনপির সমর্থনে বিজয়ী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর। এজন্য ১০ সাংগঠনিক বিভাগে সাবেক ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে পৃথক টিমও গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে দলসমর্থিত প্রায় ৪ হাজার জনপ্রতিনিধির খোঁজ পেয়েছেন তারা। শিগিগরই তাদের নিয়ে বিভাগভিত্তিক ভার্চুয়াল বৈঠক করবে দলটির হাইকমান্ড।
- ইউনিয়নে শান্তি সমাবেশ সফল করতে আওয়ামী লীগ নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন
আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ সফল করতে ৪০টি জেলায় যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের ৫৩ জন কেন্দ্রীয় নেতা। শান্তি সমাবেশ উপলক্ষ্যে মাদারীপুরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহজাহান খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য আনোয়ার হোসেন এবং শাহাবুদ্দিন ফরাজী। শরীয়তপুরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। ফরিদপুরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান। গোপালগঞ্জে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত মুহাম্মদ ফারুক খান এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আওয়াল শামীম। রাজবাড়ীতে বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। লালমনিরহাটের দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সফুরা বেগম রুমি। রংপুর যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, রংপুর বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হোসনে আরা লুত্ফা ডালিয়া।
পিরোজপুরে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গোলাম কবির রব্বানী চিনু। টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন্নাহার, মানিকগঞ্জে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, মুন্সীগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, গাজীপুরে প্রেসিডিয়াম সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, নরসিংদীতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সানজিদা খানম, জামালপুরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, শেরপুরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও কেন্দ্রীয় সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং যাচ্ছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরুকে। কুমিল্লা উত্তরে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর, চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. দীপু মনি এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ যাচ্ছেন। লক্ষ্মীপুরে যাচ্ছেন কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। চট্টগ্রাম উত্তরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। কক্সবাজারে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, রাঙ্গামাটিতে কেন্দ্রীয় সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার এবং বান্দরবানে অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জয়পুরহাটে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বগুড়ায় আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, নওগাঁয় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাখাওয়াত হোসেন শফিক, রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহান। সিরাজগঞ্জে যাবেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান, পাবনায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, ঝিনাইদহে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পারভিন জামান কল্পনা, যশোরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মাগুরায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, নড়াইলের আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মাশরাফি-বিন-মর্তুজা, বাগেরহাটে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. আমিরুল ইসলাম মিলন, খুলনায় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, বরগুনায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. সিদ্দিকুর রহমান, পটুয়াখালীতে সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন এবং বরিশাল জেলায় যাবেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান।
এছাড়া যেসব জেলার নাম উল্লেখ করা হয়নি সেই সব জেলায় স্থানীয় নেতা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের পাঁচ জন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যেন আন্দোলন সংগ্রামের নামে দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মাঠে সতর্ক পাহারায় থাকবেন। এর প্রথম কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারি দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এছাড়া দেশ ও জনগণের কল্যাণে শেখ হাসিনার সরকার কী কী করেছেন তা ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে।
- ইউনিয়নে পদযাত্রার পালটা কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান মির্জা ফখরুলের
ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রার পালটা কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার ঢাকার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলেন ফখরুল এই আহ্বান জানিয়ে বলেন, ক্ষমতাসীনরা পালটা কর্মসূচির মাধ্যমে সংঘাতের উসকানি দিচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ পালটা কর্মসূচি দিচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচিতেও তারা পালটা কর্মসূচি ঘোষণা করায় আওয়ামী লীগের মূল চরিত্র উন্মোচিত হচ্ছে। তারা ইউনিয়নে আমাদের কর্মসূচিকে নস্যাৎ করার জন্যই এ ধরনের পালটা কর্মসূচি দিচ্ছে। এই পালটা কর্মসূচি দিয়ে তারা কিন্তু গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তারা চেষ্টা করছে একটি অনিশ্চয়তার দিকে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে।