শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

মহামারি যেভাবে নিঃশেষ করলো ৬৪টি এয়ারলাইনকে

আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:০৮

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারী অন্যান্য অনেক খাতের মতো বিমান চলাচল খাতকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। ২০২০ সালে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ার পর করোনা ভাইরাসটির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবের কারণে ৬৪টি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে যায়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বের অধিকাংশ বিমানবন্দরে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ফলস্বরূপ, বিমানবন্দরগুলো খালি হতে শুরু করে এবং বিমান সংস্থার আয় কমে যায়।

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারী অন্যান্য অনেক খাতের মতো বিমান চলাচল খাতকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।

যাইহোক বিশ্লেষকরা আশা করেছিলেন, বিমান চলাচল ও পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়াবে এবং ২০২৩ সালে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। 

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বুকিং কোম্পানি ফ্লাইট সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিমান ভাড়া গড়ে ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এ কারণে যাত্রীসংখ্যা কমছে এবং চাপে রয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। 

যাইহোক বিশ্লেষকরা আশা করেছিলেন, বিমান চলাচল ও পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়াবে এবং ২০২৩ সালে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

ফরোয়ার্ডকিজ নামক একটি কোম্পানি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন ট্রাভেল এজেন্সির টিকিটিং ডেটাবেস থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। তাদের মতে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী ফ্লাইট বুকিংয়ের সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় ২২ শতাংশ কম। 

এর মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য (৫ শতাংশ নিচে), উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা (৯ শতাংশ), ইউরোপ (১৫ শতাংশ) ও আফ্রিকা (১৮ শতাংশ)। এয়ারলাইন বন্ধ একটি নতুন ঘটনা নয়। যাইহোক, এই মহামারী সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধ বা সন্ত্রাসী হামলার চেয়ে বিমান চলাচল খাতকে আরও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে।

ফরোয়ার্ডকিজ নামক একটি কোম্পানি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন ট্রাভেল এজেন্সির টিকিটিং ডেটাবেস থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করেছে।

এভিয়েশন ওয়েবসাইট অলপ্লেন ডট টিভির অনুসারে, ২০২০ সাল থেকে কমপক্ষে ৬৪টি এয়ারলাইন তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। কিছু কোম্পানি দেউলিয়া ঘোষণার পর নিজেদের পুনরুজ্জীবিত করেছে বা নাম পরিবর্তন করে বাজারে পুনরায় প্রবেশ করেছে। 

কিন্তু অধিকাংশই চিরতরে বন্ধ। যদিও জেট টাইম, নকস্কুট বা ফ্লাই মাই স্কাই এর মতো নামগুলো অধিকাংশ যাত্রীদের কাছে অপরিচিত শোনাতে পারে। কিন্তু বেশ কয়েকটি বড় এয়ারলাইনগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। 

এভিয়েশন ওয়েবসাইট অলপ্লেন ডট টিভির অনুসারে, ২০২০ সাল থেকে কমপক্ষে ৬৪টি এয়ারলাইন তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, সাবেক ইতালীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান সংস্থা আলিতালিয়া (বর্তমানে এই ভূমিকায় রয়েছে আইটিএ এয়ারওয়েজ)। এছাড়াও ২০২১ সালে, নামিবিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান সংস্থা, এয়ার নামিবিয়া অপারেশন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। 

তবে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এশিয়া বা ইউরোপে পুরানো ও স্টার্টআপ উভয়েরই অসংখ্য এয়ারলাইন্স রয়েছে এই তালিকায়। কিন্তু ইউএস এভিয়েশন সেক্টর ৪টি কোম্পানির মধ্যে সীমাবদ্ধ- আমেরিকান, ডেল্টা, সাউথওয়েস্ট ও ইউনাইটেড।

এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, সাবেক ইতালীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান সংস্থা আলিতালিয়া (বর্তমানে এই ভূমিকায় রয়েছে আইটিএ এয়ারওয়েজ)।

যুক্তরাজ্যের ক্র্যানফিল্ড ইউনিভার্সিটি ও স্পেনের কাতালোনিয়ার ওপেন ইউনিভার্সিটির বিমান পরিচালনার সিনিয়র লেকচারার পেরে সুও-সানচেজ সিএনএনকে জানিয়েছেন, মহামারীর পরে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মার্কিন অবকাঠামো অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। এয়ারলাইন দেউলিয়া হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। 

শীঘ্রই ছোট ও আঞ্চলিক কোম্পানিগুলো বড় এয়ারলাইন্সের ব্যানারে একীভূত হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। ইউরোপে ইতোমধ্যে এয়ার লিংগাস, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, আইবেরিয়া, লেভেল ও ভুয়েলিং এর মালিকানা নিয়েছে আইএইজি। সানচেজের মতে, আগামী কয়েক বছরে ভাড়া বাড়তে থাকবে এবং গড় ২৫ শতাংশ হতে পারে। 

শীঘ্রই ছোট ও আঞ্চলিক কোম্পানিগুলো বড় এয়ারলাইন্সের ব্যানারে একীভূত হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।

এভিয়েশন ওয়েবসাইট ফ্লাইটগ্লোবালের কৌশলগত বিষয়বস্তুর প্রধান মুর্ডো মরিসন জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস মহামারি আরও খারাপ হওয়ার কারণে ফ্লাইটের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কম ছিল। এ কারণে ২০১৯ সালের তুলনায় দূরপাল্লার ফ্লাইটের ভাড়া অনেক বেশি।

তবে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে ফ্লাইট ভাড়া কমবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি আরও আশা করেন, ২০২৩ সালে আর কোন বড় এয়ারলাইন দেউলিয়া হবে না।

ইত্তেফাক/ডিএস