সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার শাকমাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহীন আলমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন তারই শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হীরেন্দ্রনাথ বসাক।
অভিযুক্ত শাহীন আলম এক সময় ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীতে পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে জোরপূর্বক আত্মসাত করছেন। বিশেষ করে বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে হাতিয়ে নিচ্ছেন অভিযুক্ত শাহীন আলম ।
প্রধান শিক্ষক হীরেন্দ্র নাথ বসাক বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় তার বিদ্যালয়ে। তিনি ও শাহীন ব্যাংক থেকে টাকা তোলেন। তারপর টাকাগুলো গুণে দেখার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে নেন শাহীন। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমের টাকার অর্ধেক সভাপতিকে দিতে হয়। এসব কথা লজ্জায় কাউকে বলাও যায় না।
এতোদিন কেনো শিক্ষা অফিসকে অবগত করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো লাভ হবে না জানিয়ে। কারণ ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা থেকে শিক্ষা কর্মকর্তা আখতারুজ্জানকে দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমানকে দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। এবং শিক্ষা অফিসে ভ্যাট ও আয়কর (আইটি) দিতে হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। তারপরও মাত্র ৬৫ হাজার টাকায় বিদ্যালয়ের মেরামতের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখনও আমার কাছে কিছু টাকা উদ্বৃত্ত রয়ে গেছে।
অভিযুক্ত শাহীন আলম বলেন, সব বিদ্যালয়ে একই রকম কাজ করা হয়। টাকাও সমান ভাগাভাগি হয়েছে। শুধু তাকেই কেনো দোষী করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ৫৫ বিদ্যালয়ে ২ লাখ করে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরে। এছাড়াও উপজেলার ১৩৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফান্ডের ৫০ হাজার, রুটিন মেইনটেন্যান্স কার্যক্রমে ৪০ হাজার ও প্রাক প্রাথমিকের জন্য ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রতিবছর।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির দুই নেতা বলেন, বিধি মোতাবেক ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবন মেরামতের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। শর্ত থাকে বিদ্যালয়ে শ্রেণিসংকট থাকতে হবে ও শিক্ষার্থী বেশি থাকতে হবে। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিস বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে অপেক্ষাকৃত ভালো ও ছোট ভবনগুলো বার বার মেরামতের বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। ফলে কম খরচেই বিদ্যালয়ের মেরামত হয়ে যায়।
শিক্ষক নেতারা আরও বলেন, জরুরিভিত্তিতে মেরামত কাজ করা প্রয়োজন এমন অনেক বিদ্যালয় অবহেলায় পড়ে রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বরাদ্দের টাকায় নামমাত্র মেরামত করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বরাদ্দে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে আগে থেকেই কাজ করা ছিলো। এসব বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীও কম।
চন্ডিভোগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পার্থ স্বারথী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের কোনো প্রয়োজন ছিলো না। তারপরও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে শিক্ষকরা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকদের ওপর ক্ষুব্ধ। কিন্তু হয়রানির ভয়ে তারা প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। তাদের অভিযোগ ক্ষুদ্র মেরামত, রুটিন মেইনটেন্যান্স ও উপকরণ ক্রয় বাবদ বরাদ্দের কোনো ক্ষেত্রেই সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার নামে যদি ২০ হাজার করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিদ্যালয়ের সভাপতিরা যদি ৫০ হাজার করে নেয়। তাহলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা কত টাকা আত্মসাত করেছেন খুঁজে বের করেন। একই অফিসে দীর্ঘ সময় চাকরি করার বিষয়ে বলেন, বদলি করা হলে চলে যাবো।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুসাব্বীর হোসেন খান বলেন, মাত্র কয়েক দিন হলো যোগদান করেছি। আগের শিক্ষা কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান অবসরে চলে গেছেন। অভিযোগের বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করছি।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সেসব ক্ষতিয়ে দেখে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।