শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

সব রেললাইনকে ব্রডগেজ করার পরিকল্পনা

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:০৪

রেল যোগাযোগ উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছে সরকার। সারা দেশে উন্নত ও আধুনিক রেলব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সব রেললাইনকে ব্রডগেজে রূপান্তরের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। দেশের বিভিন্ন নদী ও সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক ও অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগ বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। দেশের সব সিঙ্গেল লাইনকে ডাবল লাইনে উন্নীত করা হবে।

ইতিমধ্যে রেলওয়ের জন্য ৪২০টি ব্রডগেজ ওয়াগন সংগ্রহেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে রেলওয়ে ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের হিন্দুস্তান ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে। ২৩১ কোটি  ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৯৩৪ টাকা ব্যয়ে এই ওয়াগন কেনা হবে।  এছাড়া আগামী ২০৪৫ সাল পর্যন্ত স্বল্প, মধ্য, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে রেলওয়ের উন্নয়নে কাজ হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির যৌথ অর্থায়নে ওয়াগন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ওয়াগনগুলোর স্টেইনলেস স্টিল বডি, উচ্চগতি সম্পন্ন এবং অটোমেটিক এয়ার ব্রেক সিস্টেম সংবলিত হওয়ায় সাধারণ ও বিশেষায়িত পণ্য যেমন বিভিন্ন রকমের খাদ্যশস্য, সার, পাথর,  কাঠ ইত্যাদি দ্রব্য কম খরচে ও কম সময়ের মধ্যে নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

এ ছাড়া দেশের সকল মিটারগেজ রেলকে ব্রডগেজ করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রেলভবনে রেলপথ মন্ত্রণালয় আয়োজিত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সুবিধাদি প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের পরামর্শক সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে যৌথ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশ রেলের পক্ষ থেকে চুক্তিপত্রে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান এবং যৌথ পরামর্শ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্স গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেডের (জাপান) জিএম ইউজি অসানো চুক্তিপত্রে সই করেন।     

চুক্তিসই অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, একটি উন্নত আধুনিক রেল যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০৪৫ সাল পর্যন্ত স্বল্প, মধ্য, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উপর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশা তৈরির কাজের লক্ষ্যে কনসালটেন্সি সার্ভিস নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হার্ডিঞ্জ সেতু শতবর্ষ পার করেছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশাপাশি একটি নতুন সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে যাচাইকরণ ও বিস্তারিত নকশা তৈরি, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও লাকসাম রুটে কর্ড লাইন নির্মাণ করা। এটি নির্মিত হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ৯১ কিলোমিটার কমে যাবে।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-তারাকান্দি-জামালপুর- দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর প্রকল্প,  যশোর-বেনাপোল রুটে বিদ্যমান লাইনের সমান্তরাল একটি ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ প্রকল্প,  ভৈরব বাজার-ময়মনসিংহ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েল গেজ অথবা ব্রডগেজ লাইনে রূপান্তর প্রকল্প, সান্তাহার-বগুড়া-কাউনিয়া- লালমনিরহাট সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজকে ব্রডগেজ লাইনে রূপান্তরকরণ প্রকল্পসহ মোট ১১টি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশা তৈরির লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।

রেলপথমন্ত্রী বলেন, আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সারা দেশকে একগেজে রূপান্তর করার। এ লক্ষ্যে সব মিটারগেজ পর্যায়ক্রমে ব্রডগেজে রূপান্তর করা হবে। কনসালটেন্সি সার্ভিসের বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে সকল কর্মকর্তা চাকরি থেকে চলে যাচ্ছেন, তাদের সমন্বয়ে নিজস্ব কনসালটেন্সি ফার্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে, রেলওয়ে কাজ করছে। এর দ্বারা দেশের নিজস্ব সক্ষমতা গড়ে উঠবে, পাশাপাশি দেশের অর্থ বাঁচবে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে মোট ২৩৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। চুক্তিসই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ৪২০টি ব্রডগেজ ওয়াগন সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে ও সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান ভারতের হিন্দুস্তান ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মধ্যে চুক্তিটি সই হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে এই চুক্তিপত্রে সই করেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক  মিজানুর রহমান এবং ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রদীপ গুহ।

এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী বলেন, অবিভক্ত ভারত থেকে আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে রেলব্যবস্থা পেয়েছি। রেলকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থা হিসেবে বর্তমানে রেলওয়েকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। কারণ, বর্তমান সরকারের লক্ষ্য টেকসই উন্নয়ন।

 

ইত্তেফাক/ইআ