রোববার, ১১ জুন ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

জয়পুরহাটে একদিনে ১৪ বিয়ে, বিচ্ছেদ হচ্ছে ১০ জনের

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:০০

উত্তরাঞ্চলের ছোট জেলা জয়পুরহাটে এক জরিপে বিবাহ বিচ্ছেদের ভয়াবহ রূপ দেখা গেছে। সেখানে গড়ে প্রতিদিন ১৪ বিয়ে হলেও বিচ্ছেদ হচ্ছে ১০ দম্পতির। বিবাহের তুলনায় বিচ্ছেদের হার শতকরা ৭১ শতাংশ। 

আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী দেশে বিবাহ বিচ্ছেদে শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ। অধিকাংশ বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে পরকীয়া, দাম্পত্য কলহ, মানসিক অবসাদ ও যৌতুক। নানামুখী মানসিক চাপের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন এবং যোগাযোগ কমে যাওয়া বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।  


  
জেলা রেজিস্টার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে জেলার পাঁচ উপজেলায় মোট ৫ হাজার ২৬০ বিবাহ নিবন্ধিত হয়েছে। একই সময়ে ৩ হাজার ৭৩৬ বিচ্ছেদ বা তালাক হয়েছে। ছেলের পক্ষে তালাকের সংখ্যা হচ্ছে ৭৭৩ এবং মেয়ের পক্ষে তালাকের সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৪৭১। এছাড়া উভয় পক্ষের মীমাংসায় তালাক হয়েছে আরও ১ হাজার ৪৯২। ছেলে পক্ষের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে মেয়েদের পক্ষে তালাকের হার।  

জেলা রেজিস্টার শরীফ তোরাফ হোসেন বলেন, জেলায় যে পরিমাণ বিবাহ হচ্ছে তার চেয়ে বিচ্ছেদ তুলনামূলক বেশি হচ্ছে। গত এক বছরে জেলায় তালাকের বা বিবাহ বিচ্ছেদের হার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জয়পুরহাটে যৌতুক সমস্যা বেশি। এছাড়া মোবাইল ফোনে পরকীয়া, দাম্পত্য কলহ, সন্দেহ সৃষ্টিসহ নানা কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ বেশি ঘটছে বর্তমানে।  

ব্র্যাকের জয়পুরহাট সদর অফিসের কর্মকর্তা সন্ধ্যা তপ্ন বলেন, আমরা কখনোই বিবাহ বিচ্ছেদ চাই না। নবদম্পতিকে কাউন্সেলিং করে থাকি। যাতে তারা সংসার জীবনে একে অপরের সঙ্গে কলহে না জড়ায়। 

ক্ষেতলাল ছাঈদ আলতাফুন্নেছা সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক তানজির আহমেদ বলেন, জয়পুরহাট জেলায় বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হচ্ছে বাল্যবিবাহ। কম বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে সংসারে গিয়ে তারা নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে না। 

জয়পুরহাট সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক তাসলিমা খাতুন বলেন, নারীদের মধ্যে এখন অনেকটা স্বাধীনচেতা হওয়া কাজ করে। বিয়ের পর স্বামীর পরিবারের অনেক কিছু তারা মেনে নিতে পারেনা। আবার ডিজিটাল যুগে সহজেই অন্যের সঙ্গে কানেক্টিভ হওয়া যায়। বন্ধু হিসেবে মোবাইলে একে অপরের সঙ্গে কথা হতেই পারে। এক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত তারা অল্পতেই গ্রহণ করছে। এছাড়া যৌতুক প্রথা কিছুটা কমে গেলেও উপহার নেওয়ার সিস্টেম চালু থাকায় বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পাওয়া না পাওয়ার বিষয় নিয়ে কলহ শুরু হয়।  এক পর্যায়ে তা ডিভোর্সে রূপ নেয়। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বিজয় কৃষ্ণ বনিক বলেন, বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতি আসক্তি। দিন দিন সামাজিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষও অর্থের পেছনে ছুটছে। এতে সামাজিক বন্ধন ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। পাশাপাশি কলহ বেড়ে যাচ্ছে। আগে মানুষ ভেবেচিন্তে একটা সিদ্ধান্ত  গ্রহণ করতো, এখন সময় নেই। কিছু একটা হলেই তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত, যেন কারও কোনো দায়িত্ব নেই।

ইত্তেফাক/এবি/পিও