রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠের ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির নেতাকর্মীদের লাগামহীন শিক্ষার্থী নির্যাতন, হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, চাঁদাবাজি ও আবাসিক শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক হল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। ছাত্রলীগের লাগামহীন বিরূপ আচরণের শিকার হচ্ছেন হল প্রাধ্যক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। অথচ ভিকটিম সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রশিবির এবং ভুক্তভোগী ‘শিক্ষকদের ‘জামায়াত-শিবির’ আখ্যা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অন্তত ৪২টি লিখিত অভিযোগ প্রক্টর দপ্তরে জমা পড়েছে। করোনার সর্বশেষ লকডাউনের পর ২৩ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেননি এমন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক শ বলে জানা গেছে। অধিকাংশ ঘটনা প্রাথমিক অনুসন্ধানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলেও একটি ঘটনায়ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বরং অভিযুক্তরা ভিকটিমদের ‘ছাত্রশিবির’ আখ্যায়িত করে উলটো প্রশাসনের আনুকূল্য পেয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র মতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে দেওয়া অভিযোগের মাত্র ১৩টির বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে মাত্র ছয়টির। এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের কাউকে শাস্তির মুখোমুখি করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মনে করছেন, এসব ঘটনায় জড়িতরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি না হওয়ায় ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য কমছে না, বরং দিন দিন বাড়ছেই।
সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক শিক্ষার্থীকে হল শাখা সাধারণ সম্পদের রুমে আটকে রেখে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের পর ছাত্রশিবির আখ্যায়িত করার হুমকি দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। তখন ঐ শিক্ষার্থী নিজেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী বলে জানালে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনুগত কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের নবীন-বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চেয়ার ভাঙচুরের মাধ্যমে অনুষ্ঠান পন্ডের অভিযোগ করেন বিভাগীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় পলায়নরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের উপ আইন সম্পাদক সৌমিক ও ছাত্রলীগ কর্মী আতিককে আটক করে বিভাগের অফিসে নিয়ে যান শিক্ষকরা। পরে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া আটক দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বাইরে নিয়ে ছেড়ে দেন।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নিয়ে আমরাও ভাবছি। তাদের এমন ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডে আমরা অসহায় অনুভব করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যে কারণে আরো বেপরোয়া হচ্ছে অভিযুক্তরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এসব বিষয়ে সচেষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্র নির্যাতন ও শিক্ষক লাঞ্ছিতের প্রতিরোধে কমিটি গঠন করা হয়েছে।