বিভিন্ন উৎসবকে টার্গেট করে রাজধানীতে ওত পেতে থাকে ছিনতাইকারীরা। সম্প্রতি শাহবাগ, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, কমলাপুর, খিলগাঁওসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বড় ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে একটি চক্র। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঐ সব এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী চক্রের হোতাসহ ২৯ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। এছাড়া গত ছয় মাসে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ৫৯টি অভিযান চালিয়ে ২০৪ জনকে আটক করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার র্যাব-৩ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি জানান, সর্বশেষ অভিযানে আটক ২৯ জনের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ দেশীয় ধারালো অস্ত্র জব্দ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সুইচ গিয়ার, চাকু, ক্ষুর, এন্টিকাটার, কাঁচি, ব্লেড, মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকা। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে রাকেশ ওরফে কালা চান, আব্দুল মান্নান, ইমরান গাজী, আকাশ, ইসরাফিল, সিয়াম, মানিক, নাহিদ পারভেজ, আরাফাত, শাকিল, রিয়াদ, আব্দুল রব মিয়া, সাইফুল ইসলাম, রাসেল, ইসমাইল, লোকনাথ রাজ বংশী, শম্ভু চন্দ্র দাস, শামীম, রাজু, মোজাফফর, হাসান, হৃদয়, আরিফ, আতিকুল ইসলাম, হেলাল, রুবেল, রতন ওরফে মানিক, তছলিম ও আনোয়ার।
আটককৃতদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বাড়ে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন এবং বইমেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি হয়। এ সুযোগে শাহবাগ, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, কমলাপুর, খিলগাঁওসহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় ধরনের ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে এই চক্র। এছাড়া আসন্ন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে নাশকতা তৈরির মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ছিনতাই করারও পরিকল্পনা ছিল তাদের।
তিনি বলেন, সাধারণত এসব এলাকায় ছিনতাইকারী চক্রটির সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। এছাড়া চক্রের অন্য সদস্যরা বিভিন্ন অলিগলিতে ওত পেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতেও দ্বিধা বোধ করে না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যে ব্যক্তির কাছ থেকে ছিনতাই করবে তাদের আগে থেকে অনুসরণ করতে থাকে। আর অনুসরণকৃত ব্যক্তির সঙ্গে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলে থাকে। একপর্যায়ে কথা বলতে বলতে ঐ ব্যক্তিকে সুবিধামতো কোনো জায়গায় নিয়ে যায়। পরে সেখানে ছিনতাইকারী চক্রের অন্য সদস্যরা উপস্থিত হয়। চক্রের একজন ঐ ব্যক্তির সঙ্গে বিতর্কে জড়ায় ও মারধর শুরু করে।
লোকজন এগিয়ে এলে বলে, নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এ মারামারি। ততক্ষণে ছিনতাইয়ের কাজটি তাদের চক্রের কেউ একজন সেরে ফেলে। এছাড়া তারা ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে থাকে। আর ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন দেশীয় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে। যখন কোনো রিকশা অথবা সিএনজি অটোরিকশা আরোহী যাত্রীদের টার্গেট করে। তারা অন্য একটি রিকশা অথবা সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করে পিছু নিতে থাকে। সুবিধামতো জায়গায় পৌঁছে যাত্রী এবং চালককে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীর সবকিছু লুটে নেয়। এই চক্রের সদস্যদের প্রায় সকলের বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে।