উন্নয়নশীল দেশগুলোর অনেক অংশে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ সম্ভব হয়নি। পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানিও অনেকের নাগালের বাইরে। নাইজেরিয়ার গ্রামাঞ্চলে এক প্রকল্পের মাধ্যমে এক ঢিলে অনেক পাখি মারা হচ্ছে। বিদ্যুতের মাধ্যমে ওয়েল্ডিং টর্চ জ্বালানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে মোবাইল ফোনও চার্জ হচ্ছে।
পাশের সেলুনে একটা পাখাও চলছে। কয়েক বছর আগে ওগুন প্রদেশের বম্বু-বম্বুতে এমন দৃশ্য কল্পনাও করা যেত না। গ্রামটি বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত নয়। এখন সেখানে নিজস্ব ছোট সোলার প্লান্ট চালু হয়েছে। পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির কল্যাণে গোটা গ্রাম পাবলিক গ্রিডের উপর নির্ভরশীল নয়।
নাইজেরিয়ার 'এনার্জি সাপোর্ট' কর্মসূচির কল্যাণে বম্বু-বম্বুসহ প্রায় ১০০টি জনপদের উপকার হয়েছে। এই প্রকল্প জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তা পায়। স্থানীয় কোম্পানিগুলো সোলার প্লান্ট তৈরি করে ও সেগুলো চালায়।
কর্মসূচির প্রধান ডিউক বেনজামিন বলেন, 'ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানির উন্নয়ন সাহায্য মন্ত্রণালয় নাইজেরিয়ার এনার্জি সাপোর্ট কর্মসূচি কমিশন করেছিল৷ এই উদ্যোগ নানা ভাবে নাইজেরিয়ার মানুষকে সাহায্য করেছে। আমরা মূলত দেশে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি সাশ্রয় ও বিদ্যুতায়ন তরান্বিত সহায়তা করছি। আমরা ৩০ হাজার মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে এসেছি।'
নাইজেরিয়ার এই অংশে সৌর বিদ্যুৎ সত্যি স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা করে তুলেছে। রেফ্রিজারেটরের কল্যাণে মুদির দোকানে খাদ্য পণ্য আরও বেশি সময় ধরে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। গ্যাসচালিত জেনারেটরের উপর নির্ভরতা না থাকায় মিস্ত্রীরাও বিনা বাধায় কাজ করতে পারছেন।
লাগোসের 'মাক্সে' নামের পরিবহণ কোম্পানিও সেখানে শাখা খুলেছে। এই কোম্পানি এমন এক ই-বাইক তৈরি করেছে, যেটি নাইজেরিয়ার গ্রামাঞ্চলের পথেও চলার উপযুক্ত। সোলার প্লান্টের ঠিক পাশেই সেই যান ভাড়া নেওয়া যায়।
মাক্স নাইজেরিয়ার প্রতিনিধি দোতুন আয়ংবেলে বলেন, 'এই সব মানুষ রো়ড নেটওয়ার্ক ও পেট্রল পাম্প থেকে বঞ্চিত। তাই গ্রামের মাঝেই যানগুলো চার্জ করার অবকাঠামো তৈরির ফলে মানুষের সময় বাঁচছে। দূর থেকে যানের জন্য জ্বালানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে না। এভাবে সময় বাঁচানোর বড় প্রভাব দেখা যাচ্ছে, এমনকি নিরাপত্তারও অনেক উন্নতি হয়েছে।'
চাষি হিসেবে আদেনিজি দাউদা এমন বাইকের অনুরাগী। তিনি ডেলিভারির জন্য এই যান ব্যবহার করেন। গ্যাসের দাম বেড়ে চলার কারণেও তিনি ই-বাইক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন দিনে তার এক থেকে দুই ইউরো ব্যয় হয়।
চাষি হিসেবে আদেনিজি দাউদা বলেন, 'সৌরশক্তি আমাদের গ্রামে সমৃদ্ধি এনেছে। মানুষ এখন বাতি, টেলিভিশন, ফ্রিজার ব্যবহার করতে পারছেন। এখন আমাদের ওয়েল্ডাররাও সৌরশক্তি ব্যবহার করে কাজ করতে পারছেন। কাজের খোঁজে আর দূরে যেতে হচ্ছে না।'
বম্বু বম্বু সাফল্যের এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠলেও নাইজেরিয়ার গুরুতর জ্বালানি সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। কারিগরি সমস্যা ও অন্তর্ঘাতের কারণে উৎপাদিত জ্বালানির ভগ্নাংশ ব্যবহার করা সম্ভব হয়। ফলে জনসংখ্যার প্রায় ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত।
অ্যাশডাম অ্যাকাডেমির দামিলোলা আসালেয়ে বলেন, 'নাইজেরিয়ার বিদ্যুৎ সমস্যা বেড়েই চলেছে। অনেক জায়গা ২০ বা ৩০ বছরেও জাতীয় গ্রিডের আওতায় আসেনি। আমরা নাইজেরিয়ায় জীবাশ্ম ভিত্তিক জ্বালানিচালিত জেনারেটরের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল, যার মূল্য অত্যন্ত বেশি। পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি নাইজেরিয়ার সমস্যার সমাধান সূত্র। এর ঠিকমতো ব্যবহারের প্রয়োজন।'
দামিলোলা আসালেয়ে সৌর প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দেন। নাইজেরিয়ার পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ অ্যাশডাম অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সে দেশের এনার্জি সাপোর্ট কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিনামূল্যেই সেই সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আসালেয়ের মতে, তার গ্র্যাজুয়েটদের চাকরি পাবার সম্ভাবনাও বেশি।
অ্যাকাডেমির গ্র্যাজুয়েটরা বম্বু বম্বুর সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ করেন। গ্রামটিকে নাইজেরিয়ায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির 'রোল মডেল' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তারা সাহায্য করেছেন। এক বছরের মধ্যে নাইজেরিয়া সরকার আরও এক লাখ মানুষকে নির্মল জ্বালানি উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে।