জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি বলেছেন, গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ যাতে মানসম্মতভাবে সম্পন্ন হয় তার জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। যারা নির্মাণকাজে অনিয়ম-দুর্নীতি করে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত এসব অনিয়মকারীর বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিয়ে মামলা করে আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা। এদের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জাগরণ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার চণ্ডীপুর-কলারন আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময়
এমপি পিরোজপুর-পাড়েরহাট-টগড়া-ইন্দুরকানী-বালিপাড়া-কলারন-সন্ন্যাসী সড়কের মানোন্নয়ন কাজের শুভ উদ্বোধন করেন এবং দোয়া ও মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে তিনি আরও বলেন, আল্লাহ অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেছেন, নিজের ভাগ্য নিজে গড়তে হয় এবং তা পরিশ্রম করে আদায় করতে হয়। আমাদের দেশে এ অঞ্চলে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে হয় না। এর কারণ, যে ঠিকাদাররা কার্যাদেশ পান তারা কাজ বিক্রি করে দেন। নিজেরা কাজ না করে অনভিজ্ঞ-অর্বাচীনদের দিয়ে কাজ ওঠান। যারা কাজ পেয়ে কাজ করেন না, কাজ শুরু করেও কাজ শেষ করেন না, তাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের কাছে জবাবদিহিতা ও কৈফিয়ত চাইতে হবে।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি বলেন, আজ পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের সংসার চালানোই কষ্ট হচ্ছে। এর জন্য আমাদের মানুষ বা আমরা দায়ী নই। এর জন্য দায়ী পৃথিবীর মোড়লরা। শোষণের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছি। লুটপাট বন্ধ করতে হবে এবং এর জন্য জনগণকেই দায়িত্ব নিতে হবে। ৩৮ বছর ধরে আমরা বলে এসেছি আমাদের কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না। আমরা যদি এক থাকি তাহলে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটতে বাধ্য। আমি সব সময় বলে এসেছি, কাজের প্রশ্নে কোনো রাজনীতি করা যাবে না। রাজনীতি তো স্বাধীনতার আগেই করেছি, এখন নয়। ৮৪ সাল থেকে যে কথাটি বারবার বলেছি, তা হলো ঐক্য ধরে রাখা দরকার। আমাদের এখনো অনেক কাজ বাকি। লুটপাট বন্ধ করা না গেলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করা যাবে না।
তিনি বলেন, আজ যে সড়কের উদ্বোধন করা হলো তা আল্লাহর রহমত। আমি ১০ বছর যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলাম। কাজ আদায়ের জন্য সৎ সাহস থাকতে হয়, কলিজায় জোর থাকতে হয়। ঢাকা থেকে পিরোজপুর বা ইন্দুরকানী আসতে কতগুলো ফেরি পার হতে হতো। তা এখন কষ্ট কল্পনা। এখন পদ্মা সেতু পার হয়ে তিন ঘণ্টায় এই পথ পাড়ি দেওয়া যায়। আজকে উদ্বোধনকৃত রাস্তা সন্ন্যাসী-কলারন এর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বলেশ্বর নদের ওপর আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফেরি চালু হবে। পৃথিবীর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। যার প্রভাবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বভাবতই খারাপ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বৈরী পরিস্থিতির মধ্যে দেশ পরিচালনা করছেন। আমাদেরও ঐক্যবদ্ধ থেকে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা প্রয়োজন।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আগে ইন্দুরকানী অঞ্চলে শান্তিশৃঙ্খলার অভাব ছিল। সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠে এখন এ এলাকার মানুষ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে রাতে স্বস্তির সঙ্গে বসবাস করছে। আমাদের সবার উচিত হবে এই শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি যাতে অব্যাহত থাকে তার চেষ্টা করা; পাশাপাশি বরাদ্দকৃত অর্থ ও সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা।
পিরোজপুর সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে চণ্ডীপুর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ইন্দুরকানী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুত্ফুন্নেছা খানম, জাতীয় পার্টি-জেপির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ভাণ্ডারিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহিবুল হোসেন মাহিম, জেপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও ভাণ্ডারিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম তালুকদার উজ্জল, ইন্দুরকানী উপজেলা জেপির আহ্বায়ক ও পত্তাশী ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহীন হাওলাদার, ইন্দুরকানী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দিলরুবা নাহার মিলন, চণ্ডীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও জেপি নেতা মশিউর রহমান মঞ্জু, ইন্দুরকানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য মনিরুজ্জামান সেলিম, উপজেলা জেপির সদস্য সচিব মাসুদ করিম তালুকদার ইমন প্রমুখ।
এ সময় মঞ্চে ছিলেন ইন্দুরকানী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাগা, বালিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন বয়াতী, পাড়েরহাট ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান শাওন তালুকদার প্রমুখ।
জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি রাতে ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নে সংগঠনের একটি কার্যালয় উদ্বোধন করেন এবং দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন। ইন্দুরকানী উপজেলা সফরকালে তার সফরসঙ্গী ছিলেন ভাণ্ডারিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টি-জেপির সহ-সভাপতি ও গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল আলম খোকন সিকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজি রোকনুজ্জামান বশির, পৌর জেপির সদস্যসচিব আহসানুল কিবরিয়া ফরিদ মল্লিক, উপজেলা যুব সংহতির আহ্বায়ক রেজাউল হক রেজভী জোমাদ্দার ও সদস্য সচিব মামুনুর রশীদ সরদার, ছাত্র সমাজের উপজেলা আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম সরদার প্রমুখ।