শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অন্তত ১০০ গাড়ি প্রয়োজন

তিন বছর বন্ধ পুলিশের গাড়ি কেনা, হচ্ছে না মেরামতও

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:০০

থানা ও হাইওয়ে পুলিশের যানবাহন সংকট। তিন বছর ধরে পুলিশের নতুন গাড়ি কেনা বন্ধ রয়েছে। যা আছে তার অধিকাংশই পুরানো মডেলের, লক্কর-ঝক্কর। অনেক গাড়ি আবার ফিটনেসবিহীন। নষ্ট হলে মেরামতও করা হচ্ছে না। গাড়ি সংকটে পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রমও বিঘ্ন ঘটছে। রাজধানীসহ সারাদেশের সব থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ এখন রিকুইজিশন করা গাড়িনির্ভর। এজন্য থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে প্রতিদিনই কোনো না কোনো গাড়ি রিকুইজিশন করতে হচ্ছে। অনেক থানা পুলিশ আবার ভাড়া করা গাড়ি ব্যবহার করছে। অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েই ডিউটি পালন ও অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, দেশের উন্নয়নের প্রথম শর্ত নিরাপত্তা। সে বিষয়টি সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিতে হয়। আর নিরাপত্তা যারা দেবে, তাদের যানবাহনসহ অন্যান্য সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। পুলিশ বাহিনীর গাড়ি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। পিকআপ, প্রিজন ভ্যান, জিপ, পাজেরো থেকে শুরু করে সব ধরনের গাড়ি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। মূলত বাজেটে ঘাটতি থাকায় প্রয়োজন থাকলেও গাড়ি কিনতে পারছে না পুলিশ। মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী গাড়ি নিয়ে ডিউটি করতে গিয়ে পুলিশকে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়াও থানায় ডিউটি করার জন্য পর্যাপ্ত গাড়ি নেই।

আবার পুলিশ যে গাড়িগুলো ব্যবহার করছে তার বড় একটি অংশ ভিআইপি প্রটোকলে নিয়োজিত। কর্মকর্তাদের জন্য বেশকিছু গাড়ি কেনা হয়েছে কয়েক বছরে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। থানার ওসি এবং এসি-এএসপি (সার্কেল) যে গাড়িতে চড়েন তাও অনেক সময় নিয়মিত অভিযানে দেখা যায়। থানা পুলিশের অপারেশনাল কার্যক্রম, আসামি ধরতে যাওয়াসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে গাড়ি সংকটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় নিয়মিত টহলে পুলিশ ব্যবহার করছে রিকুইজিশন করা গাড়ি। এমনকি ব্যারাক থেকে আরেক স্থানে যাতায়াতের জন্যও পুলিশ ব্যবহার করছে রিকুইজিশন করা বাস। বেশি পুরানো ও ভাঙা গাড়ি দিয়ে টহল পুলিশকে ডিউটি করতে হয়। হাইওয়ে পুলিশের অবস্থা আরও করুন।  সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে সময় দলীয় নেতাকর্মীদের কার্যক্রমে নিরাপত্তা দেয় পুলিশ। এক্ষেত্রে পুলিশের গাড়ি প্রয়োজন। এই বিষয়টি মাথায় নিয়ে ১০০ গাড়ি ক্রয়ের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। 

আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আগের চেয়ে বর্তমান সরকারের আমলে থানায় গাড়িসহ অন্যান্য সামগ্রী বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল । তাই নতুন গাড়ি ক্রয় করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র মতে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গাড়ি রয়েছে ১ হাজার ৪১২টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৯৫২টি। এর বাইরে পিকআপ ভ্যান ২৬০টি, জিপ ৯২টি, পেট্রোল জিপ ২১টি, মাইক্রোবাস ২৬টি, বাস ১৬টি, রায়ট কার ৮টি, অ্যাম্বুলেন্স ৫টি ও প্রিজন ভ্যান ১৫টি। যানবাহনগুলোর শতকরা ৬০ ভাগই ব্যবহার অনুপযোগী। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব গাড়ি মেরামত করতে গিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের রাজারবাগ এমটি বিভাগের সদস্যদের রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থা। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের গ্যারেজে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক মোটরসাইকেল, জিপ ও অন্যান্য গাড়ি মেরামতের জন্য লাইন করে রাখা হয়েছে। এসব গাড়ি কবে চলাচলের যোগ্য হবে তা কেউ জানাতে পারেননি। পুলিশের পরিবহনপুল সূত্র মতে, প্রতিটি থানায় একটি করে প্রিজন ভ্যান থাকার কথা থাকলেও এখনো তা নিশ্চিত করা যায়নি। রাজধানীর থানা সমূহের যানবাহনের এই অবস্থা হলে ঢাকার বাইরে মেট্রোপলিটন ও জেলাসমূহের থানাগুলোর অবস্থা আরও করুন বলে কর্মকর্তারা জানান। 

জানা গেছে, গাড়ির অভাবে বেবীটেক্সি দিয়ে কোন কোন থানা এলাকা নিয়মিত টহল দিয়ে থাকে পুলিশ। কোনো কোনো থানায় সীমিত গাড়ি থাকলেও তা লক্কর-ঝক্কর। তা নিয়ে অভিযান চালাতে গেলে অপরাধীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।  এছাড়া প্রায় প্রতি থানা এলাকায় ভিআইপিদের যাতায়াত থাকে। তাদের নিরাপত্তা দিতে হয় এসব গাড়ি দিয়ে। বেশিরভাগ সময় ভিআইপি কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা পুলিশের নিরাপত্তার বাইরে চলে যান। এসব গাড়ি দিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দেওয়া আর না দেওয়া একই কথা। আর ঢাকার বাইরে বেশিরভাগ জেলা এলাকায় ইপিজেডসহ মিল-কারখানা রয়েছে। ঐ সব প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়টিও স্ব স্ব থানা পুলিশকে মাথায় রাখতে হয়। অথচ এসব কাজ করতে গিয়ে পান থেকে চুন খসলেই যত দোষ পুলিশের।

ইত্তেফাক/এমএএম