বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বর্ষপূর্তি 

সংঘাত থামছে, না আরও ভয়াবহতার পথে?

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৬

কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কিয়েভ দখলের স্বপ্ন নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে যে 'সামরিক অভিযান' শুরু করেন তা এখন পর্যন্ত অধরা। আজ শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত দেশ দুইটির মধ্যে যুদ্ধ এক বছরে গড়ালো কিন্তু, এই যুদ্ধে রাশিয়ার তেমন উল্লেখযোগ্য অর্জন নেই বলে দাবি পশ্চিমাদের। 

গেল এক বছরের যুদ্ধে উভয় দেশরই হাজার হাজার সেনা নিহত হয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়া ও পশ্চিমাদের চলমান উত্তেজনা পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। 

গত সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই আকস্মিক কিয়েভ সফরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুদ্ধকালীন সময়ে এটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম ইউক্রেন সফর। বাইডেনের এই সফরকে ঐতিহাসিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিয়েভ সফরে বাইডেন ইউক্রেনকে সাহায্য চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। 

আকস্মিক কিয়েভ সফরে যান বাইডেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেদিন জোর দিয়েই বলেন, ন্যাটো এখন আগের চেয়েও বেশি ঐক্যবদ্ধ। কিয়েভ শক্তভাবে দাঁড়িয়েছে এবং মুক্ত, আর ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমাদের সহায়তা ব্যর্থ হবে না।

অন্যদিকে বাইডেনের কিয়েভ সফরের একদিন পর মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মস্কোয় বার্ষিক ‘স্টেস্ট অব দ্য নেশন’ ভাষণ দিয়েছেন পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে তার লক্ষ্য অর্জন করবে। এ ছাড়া এই সময় তিনি তীব্র ভাষায় পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করেন।

পুতিনের নতুন হুঁশিয়ারি

যুদ্ধের জন্য পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করে বলেছেন, তারা ইউক্রেনকে ‘রুশ-বিরোধী’ দেশে পরিণত করতে চাচ্ছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বড় অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তিতে অংশগ্রহণ স্থগিত রাখেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে এই সংঘাত সহসাই থামছে না। জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ নিকোলে মিত্রোখিন বলেন, মৌলিক দৃশ্যকল্প হচ্ছে রাশিয়া বা ইউক্রেন কেউই এই যুদ্ধে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। ইউক্রেনের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চল পুরোপুরি রাশিয়া দখল করতে পারবে না বলে জানান এ বিশেষজ্ঞ। 

নিকোলে আরও বলেন, 'এই যুদ্ধ ২০২৩ সালের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালে থামতে পারে কেননা দুইপক্ষরেই যুদ্ধের যোগান ফুরিয়ে যাবে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ইউক্রেন ও রাশিয়া দুই দেশই যা অর্জন করতে চায় তার জন্য অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সার্ভিসম্যান নেই। 

কিংস কলেজ লন্ডনের রুশ রাজনীতির অধ্যাপক গুলনাজ শারাফুতদিনোভা বলেন, 'আগ্রাসন শুরুর দিকের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ ও রুশ সামরিক বাহিনী পিছু হটলেও যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের অবস্থান এখনও অবিচল।' এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কা এই প্রফেসরের। 

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক পাভেল লুজিন বলেন, মূল দৃশ্যপট একই - যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি। রাশিয়া শরত্কালে আগ্রাসনের প্রথম গুরুতর ধাপ শুরু করে এখন দ্বিতীয়টি করছে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার যুদ্ধের লক্ষ্য পরিবর্তন হয়নি; তারা ইউক্রেনকে ধ্বংস করছে। 

যুদ্ধে নিহতদের কবর

রুশ সাংবাদিক ফরিদা রুস্তমোভা বলেন, আমাদের সূত্রগুলো যা বলে তার উপর ভিত্তি করে- দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি অসম্ভব। পুতিনের অবস্থান আগের মতোই স্থিতিশীল। তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা- যা তিনি রাশিয়ায় তার ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যবহার করেন, একটুও পরিবর্তন হয়নি। এই মুহূর্তে ক্ষমতায় তার দখলে ফাটল ধরতে পারে এমন কোনো গুরুতর বিরোধী দল নেই।

তাই পুতিন রাশিয়ার শীর্ষ ক্ষমতায় থেকে সহসাই যে ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে পিছু হটছে না তাই ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা। এ ছাড়া পুতিন বারবার বলে আসছেন, ইউক্রেনে তাদের লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত দেশটিতে তাদের বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে। 

তবে বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা রুশ বাহিনীর দখলে আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারের সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়েছে।  অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অঙ্গীকার করেছেন, ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখলে যাওয়া ক্রিমিয়াসহ সব ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করবেন তিনি। তাই দুই পক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী এই যুদ্ধে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। 

একইসঙ্গে জেলেনস্কি তার দেশকে রাশিয়ার কবল থেকে বাঁচাতে ও ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে যে আধুনিক ট্যাংকসহ উন্নত অস্ত্র চাচ্ছেন- তাতে অনেক দেশই দিতে সম্মত হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু দেশ ট্যাংক সরবরাহও শুরু করেছে। 

অন্যদিকে পুতিনও পরমাণু অস্ত্র বাড়ানোর নতুন ঘোষণা দিয়ে হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে মরণঘাতী অস্ত্র পাঠাতে পারে চীন- এই নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে সতর্ক করেছে। 

তবে জাতিসংঘের মহাসচিব ফের এই যুদ্ধ বন্ধে জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বিবিসি তাদের গতকালের প্রতিবেদনে বলেছে, দুই দেশের যুদ্ধ এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে মোড় নিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যও গতকাল বলেছে, এই যুদ্ধ আরও একবছর স্থায়ী হতে পারে। তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা, গার্ডিয়ান 

 

ইত্তেফাক/এসআর