শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘কিংবদন্তি’ রামোসের এমন কষ্টের বিদায়!

আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:২২

ফুটবল তারকা ফুটবলারদের শুধু দুই হাত ভরে দেয় না, কখনো কখনো নিষ্ঠুর আচরণও করে। কিংবদন্তি সার্জিও রামোসকে সেই নিষ্ঠুরতার পিঠটা দেখতে হলো ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় এসে। দীর্ঘ ২০ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারে নিজেকে সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অনেকের মতেই সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডারদের একজন তিনি। ক্লাব-জাতীয় দল মিলিয়ে জিতেছেন সম্ভাব্য সবকিছুই। সেই সার্জিও রামোসকে স্পেন জাতীয় দল থেকে বিদায় নিতে হলো অপমাণিত হয়ে, অভিমানে, কষ্টে, মাঠের বাইরে থেকে!

স্পেনের নতুন কোচ লুইস ডি লা ফুয়েন্তেকে তির দাগিয়ে জাতীয় দল থেকে ‘অবসর’-এর ঘোষণা দিয়েছেন রামোস। কি দুর্ভাগ্য, স্প্যানিশ কিংবদন্তিকে বিদায়ের ঘোষণাটা দিতে হলো ফ্রান্সের প্যারিসে বসে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে। রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি মাঠ থেকে বীরের মতো বিদায় নেওয়ার প্রাপ্য অধিকারটুকু পর্যন্ত পেলেন না।

অথচ দেশ স্পেনের হয়ে সর্বোচ্চ ১৮০টি ম্যাচ খেলেছেন। একজন ডিফেন্ডার হয়েও তাতে গোল করেছেন ২৩ট। দেশের হয়ে এক বার বিশ্বকাপ (২০১০ সালে) ও দুইবার জিতেছেন ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা (২০০৮ ও ২০১২)। সব দেশ মিলে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়দের তালিকায় তিনি জায়গা করে নিয়েছেন ৬ নম্বরে। সেই রামোসকে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার সুযোগটাও দেওয়া হলো না। স্পেনের নতুন কোচ মুঠোফোনে কল দিয়ে জানিয়ে দেন ‘তুমি আর আমাদের পরিকল্পনায় নেই।’ জাতীয় দলের কোচের মুখ থেকে এমন কঠিন বার্তা পাওয়ার পর আর কি করার ছিল রামোসের। সঙ্গে সঙ্গেই ৩৬ বছর বয়সি রামোস অভিমানে, কষ্টে, আবেগঘন এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দেন, ‘জাতীয় দলকে বিদায় বলার সময়টা এসে গেছে, আমাদের প্রিয় ও রোমাঞ্চকর রোহা (স্পেন জাতীয় দলের ডাক নাম) ছাড়ার সময় এসে গেছে।’

তিনি আরো লেখেন, ‘এখনকার কোচের  (স্পেন জাতীয় দলের বর্তমান কোচ) কাছ থেকে আজ সকালে একটা কল পেয়েছি। তিনি বলেছেন, আমি নিজের যে সামর্থ্যই দেখাই বা যে পর্যায়েই ক্যারিয়ার চালিয়ে যাই না কেন, তিনি আর আমার ওপর ভরসা রাখছেন না। সামনেও আমাকে বিবেচনায় রাখবেন না। তাই অনেক দুঃখের সঙ্গে ভ্রমণটা এখানেই শেষ করতে হচ্ছে।’ দীর্ঘ স্ট্যাটাসে আবেগতাড়িত আরও অনেক কথাই বলেছেন রামোস।

একটা ফোন কলের মাধ্যমে স্পেন নতুন কোচ লুইস ডি লা ফুয়েন্তে যে রামোসের হৃদয়টা ফালা ফালা করেছেন, সেটি অনুমিতই। তবে শুধু ফুয়েন্তেই নয়, তার পূর্বসূরি লুইস এনরিকেও ‘অবজ্ঞা’ করেছেন রামোসকে। তিনি জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিলেন ২০২১ সালে। এরপর চোট আর অফ ফর্মের দোহাই দিয়ে রামোসকে দলেই ডাকেননি এনরিকে। এমনকি এনরিকে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের দল গড়েন রামোসকে ছাড়াই। কোচের অবজ্ঞায় শেষ বারের মতো বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন চুরমায় কষ্ট পেয়েছিলেন রামোস। এবার তো কষ্টে ক্যারিয়ারের ইতিই টানতে হলো।

ক্যারিয়ার

ম্যাচ   ১৮০টি

গোল  ২৩টি

অর্জন এক বার  বিশ্বকাপ (২০১০), দুই বার  ইউরো (২০০৮ ও ২০১২) জয়

বিদায়ি শুভেচ্ছায় রামোসকে যে যা বললেন

কোচের কাছ থেকে ‘চরম অবজ্ঞতা’র এক কল পাওয়ার পরই কষ্ট-অভিমানে-অপমানে স্পেন জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সার্জিও রামোস। যার মাধ্যমে থেমে গেল এক কিংবদন্তি ডিফেন্ডারের আন্তর্জাতিক ফুটবলের যাত্রা। স্পেনের হয়ে সর্বোচ্চ ১৮০টি ম্যাচ খেলা ৩৬ বছর বয়সি রামোসের নামের আগে যোগ হলো ‘সাবেক’ শব্দটি। বিদায়ের ঘোষণাটা যে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে দিতে হয়েছে, রামোস নিজেই সেটি জানিয়েছেন। তবে কিংবদন্তি রামোসের সেই মনোকষ্ট অনেকটাই হালকা হতে পারে সতীর্থ-বন্ধু-ভক্ত-সমর্থক-শুভাকাঙ্খিদের আন্তরিক বিদায়ি শুভেচ্ছার উষ্ণতায়। বিদায়ের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই চারদিক থেকে বানের জলের মতো ভেসে আসছে বিদায়ি অভিনন্দনের বার্তা। বর্তমানের ক্লাব সতীর্থ নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পে থেকে শুরু করে সাবেক-বর্তমানের অনেক সতীর্থেরই বিদায়ি শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন রামোস।

টুইটারে বিদায়ের ঘোষণাটা দেওয়ার পরপরই রামোসকে অভিনন্দন জানান তার পিএসজি সতীর্থ এমবাপ্পে। সতীর্থকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফরাসি তারকা এক শব্দে লিখেছেন ‘সেরা’। পিএসজির আরেক সতীর্থ আশরাফ হাকিমি লিখেছেন, ‘তোমার প্রতি শ্রদ্ধা।’ ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার অবশ্য কিছুই লেখেননি। তবে রামোসের বিদায়ি পোস্টে করতালির একটা ইমোজি দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তিনি। একই পথ অনুসরণ করেছেন নেইমারের স্বদেশি ভিনিসিয়ুস জুনিয়রও। তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন একটি মুকুলের ইমোজি দিয়ে। রিয়ালের আরেক ব্রাজিলিয়ান তারকা রদ্রিগো সাবেক সতীর্থকে অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন, ‘সবকিছুর জন্য অভিনন্দন অধিনায়ক।’

সাবেক রিয়াল সতীর্থ, যিনি বর্তমানে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলেন, সেই ফরাসি ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানে বন্ধু রামোসকে ‘কিংবদন্তি’ আখ্যায়িত করেছেন। স্পেন জাতীয় দলের সাবেক সতীর্থ, গোলরক্ষক ডেভিড ডি গেয়া শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আরো একটু ব্যতিক্রমীভাবে, যাতে প্রতিবাদের একটা গন্ধও মিলছে। তিনি যে লিখেছেন, ‘কোনো শব্দ উচ্চারণের দরকার নেই।’ সাবেক দুই রিয়াল সতীর্থ, ক্রোয়েশিয়ান লুকা মডরিচ ও কলম্বিয়ান হামেশ রদ্রিগেজ একবিন্দুতে মিলে ‘কিংবদন্তি’ সম্বোধন করেছেন। রিয়ালের আরেক সাবেক সতীর্থ লুকাস ভাসকুয়েজ লিখেছেন ‘তুমি কিংবদন্তি।’

ইত্তেফাক/জেডএইচ