বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে লবণের দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে চাষীরা

আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:৩৯

আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদেশ থেকে লবণ আমদানি কমে যাওয়ায় দেশীয় লবণের চাহিদা ও দাম বেড়েছে। ফলে এবার কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় লবণ চাষের জমির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার একর বেড়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে হঠাৎ দেশীয় লবণের মূল্য কমে গেছে।

বর্তমানে প্রতি মণ লবণের দাম ৫০০ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২৫০ টাকায়। এতে দেশীয় লবণচাষীরা বিপাকে পড়েছে এবং লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৬৬ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ চাষ করা হচ্ছে। আর এসব জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মাসের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিগত ৩ মাসে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ছয় লাখ সাড়ে ৭৪ হাজার মেট্রিক টন লবণ। যা গত মৌসুমের তুলনায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন বেশি। গত বছর এ সময়ে উৎপাদন হয়েছিল প্রায় দুই লাখ ৯১ হাজার ৫৮ টন।

দেশীয় লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা জরুরি। ছবি: ইত্তেফাক

বিসিক জানায়, সপ্তাহখানেক আগেও মণ প্রতি লবণ বিক্রি হয়েছিল ৫০০ টাকায়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে লবণের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে চাষিরা হতাশ হচ্ছেন। লোকসানের আশঙ্কায় উৎপাদন বন্ধ রাখা হলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হয়ে পড়বে।

কক্সবাজার লবণ ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মকছুদ আহমদ বলেন, অসাধু মিলমালিক সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্র বন্ধ ও দেশীয় লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা জরুরি। সপ্তাহখানেক আগেও জমিতে মণ প্রতি ৫০০ আর মিল পর্যায়ে ৫৭০ টাকা পাওয়া গেছে। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে জমিতে ২৬০ আর মিলে ৩৪০ টাকা। হঠাৎ এমন দরপতন মেনে নেওয়া যায় না। ন্যায্যমূল্য না পেলে লবণ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

দেশীয় লবণ শিল্পের বাজার ধ্বংস করতে যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের কঠোর শাস্তির দাবি লবণচাষীদের।

লবণচাষীদের অভিযোগ, সপ্তাহ আগেও প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছে ৫০০-৪৯০ টাকায়। এখন সেই লবণ বিক্রি করতে হচ্ছে ২৫০ টাকায়। উপকূলে উৎপাদিত বেশিরভাগ লবণ মিলমালিকরা কিনে নেন। তাদের সিন্ডিকেট কারসাজির কারণে লবণের মূ্ল্য হঠাৎ কমে গেছে। আগামীতে লবণের দাম আরও কমতে পারে। ফলে উৎপাদন খরচ তুলতে পারবে কিনা সেটা নিয়েই তারা শঙ্কায় রয়েছেন।

মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম আজাদ বলেন, মাঠ থেকে আনা এক বস্তা (দুই মণ) লবণ আমরা ৭২০ টাকায় কিনছি। মণ প্রতি লবণের দাম পড়ছে ৩৬০ টাকা। কিন্তু চাষীরা পাচ্ছেন ২৫০ টাকায়। বাকি টাকা মধ্যস্বত্বভোগী ও দাদন ব্যবসায়ীদের পকেটে যাচ্ছে।

কয়েক দিন ধরে লবণের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ছবি: ইত্তেফাক

তিনি জানান, নানা শর্তে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম দাদন নিয়ে চাষে নামেন চাষীরা। উৎপাদিত লবণ বিক্রির সময় মণপ্রতি ৪০-৫০ টাকা কমিশন নেন দাদনরা। ফলে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারের উচিত প্রান্তিক চাষীদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা।

বিসিক লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, পলিথিন প্রযুক্তিতে এখন ৬৬ হাজার একর জমিতে দৈনিক ১৭ হাজার মেট্রিক টনের বেশি লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। চাষীরা, মৌসুমের শুরুতে (ডিসেম্বর) মাঠে উৎপাদিত প্রতি মণ লবণ ৩৫০ টাকায় বিক্রি করেছে। জানুয়ারিতে সেই লবণ বিক্রি হয় প্রতি মণ ৫০০ টাকা। তবে এখন তা কমে প্রতি মণ ২৫০ টাকায় ঠেকেছে। লবণের দাম আবার বাড়বে, সে আশায় চাষিরা উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন।

পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিক আহমদ বলেন, বেশ কয়েক বছর লবণের দাম নাজুক অবস্থায় ছিল। কিন্তু গত বছর লবণ দাম বাড়ায় চাষীরা নতুন করে লবণ চাষে ফিরেছিলেন। এখন আবার দাম কমে যাওয়ায় হতাশা তারা। লোকসানের ঝুঁকি নিয়ে লবণ উৎপাদনের সক্ষমতা অনেকের নেই। তাই মিলমালিকদের কারসাজি বন্ধে এখনই প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

প্রতি মণ  লবণের দাম ৫০০ টাকা থেকে কমে ২৫০ টাকায়। ছবি: ইত্তেফাক

বিসিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী জেলায় প্রান্তিক লবণচাষীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ২৩১। চাষীদের সহযোগী হিসেবে মাঠে কাজ করেন আরও ৮৭ হাজার শ্রমিক। গত মৌসুমে প্রায় ৫৭ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয় প্রায় ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৩৬ মেট্রিক টন। এ বছর চাষ হচ্ছে ৬৬ হাজার ৩০০ একর জমিতে।

ইত্তেফাক/এবি/আরএজে