বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব কারাবন্দি রুহুল কবির রিজভী অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে অন্য দাগী আসামিদের সঙ্গে ঢাকার নিম্ন আদালতে আনা-নেওয়ার ফলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার আইনজীবীরা জানান, আজ বৃহস্পতিবার কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে দাঁড় করিয়ে ঢাকার সিএমএম কোর্টে আনা-নেওয়া করা হয় রিজভীকে। সেই প্রিজন ভ্যানে বসার জন্য কোন বেঞ্চ বা দাঁড়িয়ে থাকার জন্য হাতলও ছিল না। ফলে কারাগার থেকে পুরানো ঢাকার ভয়াবহ যানজট পেরিয়ে দীর্ঘ সময়ের পথে তাকে প্রিজনভ্যানের ভেতরে একটি টায়ারের ওপর বসে আসতে হয়।
রিজভীর স্ত্রী আরজুমান আরা বেগম সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, রুহুল কবির রিজভী একজন বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি। তাকে সর্বদা লাঠির ওপর ভর দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। অন্যের সাহায্য ছাড়া সিঁড়ি কিংবা অসমতল স্থানে হাটঁতে পারেন না। এমন একজন রাজনীতিবিদকে সেই কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুরনো ঢাকার আদালতে প্রিজনভ্যানে দাঁড় করিয়ে সীমাহীন অমানবিক ও নির্দয়মূলকভাবে আনা-নেওয়া করা হচ্ছে।
রিজভীর স্ত্রী আরও বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে একইভাবে তাকে আনা হয় এবং আবার পৌনে ১২টার দিকে একইভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে চরমতম অমানবিক, অসাংবিধানিক ও নিষ্ঠুর আচরণ এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
আরজুমান আরা বেগম বলেন, রুহুল কবির রিজভী কারাগারে যাওয়ার আগে অনেকটা সুস্থ ছিলেন। কারাগারে যাওয়ার পর তার অসুস্থতা প্রচণ্ড বেড়েছে। মুখের দিকে তাকালে চেনা যায় না। হাত ও মুখের চামড়া কালচে হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে, এলোমোলো চেহারা। আসলে তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, রুহুল কবির রিজভীকে দেখার পর নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারিনি। তাকে চিনতে যে কারো কষ্ট হবে। রিজভী শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার শরীর ভালো নেই। তার অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসা দরকার। তার নিয়মিত খোঁজ-খবরও নিতে দেওয়া হয় না। তার নামে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তাকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না।
গত ২৩ জানুয়ারি রিজভী কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলেও জানান আরজুমান আরা।
এর আগে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও রিজভীর সঙ্গে তার স্ত্রী এবং চিকিৎসককে দেখা করতে দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে আরজুমান বলেন, ‘সেদিন মামলার হাজিরার জন্য রিজভীকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিএমএম কোর্টে আনা হয়েছিল। সেদিন আদালতে আনার পর তাকে রাখা হয় হাজতখানায়। পরে তার শারীরিক অসুস্থতা এবং মামলার বিষয়ে স্ত্রী আরজুমান আরা বেগম দেখা করতে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের অনুমতি চান। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে সাক্ষাতের অনুমতি দেন। রিজভীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক রফিকুল ইসলামকেও সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু হাজতখানার ওসি রিজভীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেননি। দুই ঘণ্টা কারাগারের হাজতখানায় রাখার পর সেদিন সাড়ে ১২টায় ফের রিজভীকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।’
রিজভীর প্যানেল আইনজীবী মশিউর রহমান শান্ত বলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তিনি গত ৮ ডিসেম্বর থেকে পল্টন থানার মামলায় কারাগারে বন্দি। তার অসুস্থতা ও মামলাজনিত কারণে স্ত্রী আরজুমান আরা বেগম ও চিকিৎসকের সাক্ষাৎ প্রদান জরুরি। এ বিষয়ে আমরা আদালতের কাছে আবেদন করলে তা মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু হাজতখানার ওসি আদালতের আদেশকে সেদিন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
রিজভীর স্ত্রী বলেন, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় রুহুল কবির রিজভী পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তখন দেশে ও পরে বিদেশে তার পেটে অস্ত্রোপচার হয়। এরপর মাঝেমধ্যে তার পেটে সমস্যা হতো। সেই থেকে প্রায় ৩০ বছর ধরে রিজভী হাতের স্পর্শে খাবার খান না। খোলা পানিও খান না।
উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওইদিনই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সাড়ে চার শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। সেদিন রিজভীকেও আটক করে কারাগারে নেওয়া হয়। সম্প্রতি তাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি কারাগারে যাওয়ার আগে দলের বিভিন্ন বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন। বিশেষ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ও হামলা-মামলা নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন করতেন।