মুসলিম সমাজে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মসজিদের খাদিমের মর্যাদা অত্যধিক। তারা মুমিন-মুসলিমের কাাছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র। এখনো মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে তাদের সম্মান ও সম্মানি তুলনামূলকভাবে বেশি। কিন্তু পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে কেন এর ব্যতিক্রম হবে? মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ঘর। মুসলমানদের কাছে প্রিয় ও পবিত্র স্থান। মসজিদ আবাদ ও দেখভালের কাজে যুক্ত থাকেন ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিম। এটা তাদের পবিত্র দায়িত্ব। পবিত্র কুরআনের সুরা তাওবার ১৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ বা রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা ইমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং সালাত কায়েম করে ও জাকাত আদায় করে। আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, তারা হেদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মসজিদ আবাদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মর্যাদা কত বেশি। আল্লাহ ছাড়া তাদের আর কাউকে ভয় করার কথা নয়। কিন্তু দেখা যায়, মসজিদ কমিটির কাছে তারা অনেক সময় একপ্রকার জিম্মি হয়ে পড়েন। সাহস করে ইসলামের অনেক কথা বলতে পারেন না।
এটার মূল সমস্যা হলো, জীবন ধারণের জন্য ন্যূনতম আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পান না অনেকেই। তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার কথাও আমরা যেন চিন্তা করতে পারি না। অথচ মুসলমানদের জীবনে মসজিদে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নামাজ মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য পরিশুদ্ধতা ও একাগ্রতা প্রয়োজন। একজন জ্ঞানী ইমাম সাহেব ইবাদতের পরিশুদ্ধতার কারণ হতে পারেন। তিনি আত্মার সংশোধন ও চারিত্রিক উন্নয়ন তথা চরিত্র গঠনের জন্য দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, খেয়াল করলে দেখা যায়, সম্মানিত ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিম সাহেবগণের বেতন অথবা সম্মানী প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
যেমন—আমাদের সিলেট শহরের মোটামুটি বড় পরিসরের মসজিদগুলোতে সম্মানিত ইমামগণ সম্মানি অথবা বেতন হিসেবে পাচ্ছেন ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা মাত্র। মুয়াজ্জিন সাহেবগণের বেতন অথবা সম্মানী ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। গ্রামাঞ্চলের অনেক মসজিদে ইমাম সাহেবগণ পাচ্ছেন ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা আর মুয়াজ্জিনগণ পাচ্ছেন ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা মাত্র। অনেকে আবার হাদিয়াস্বরূপ সামন্য কিছু অর্থ পেয়ে থাকেন। অর্থনৈতিক যুক্তি অনুযায়ী দ্রব্যের দাম, শ্রমের মজুরি ইত্যাদি চাহিদা ও জোগানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে সম্মানিত ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমদের সম্মানী এই সূত্র অনুযায়ী হওয়া কাম্য নয়। ঢাকা শহরের উত্তর শ্যামলী এলাকার একজন সম্মানিত ইমামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তার সম্মানী প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এটা মোটামুটি ভালো সম্মানী হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। দরিদ্র অঞ্চলের মসজিদ কর্তৃপক্ষের হয়তো বেশি সম্মানী দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু ধনী এলাকার মসজিদগুলোতে বিবেচনাহীন ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের কম বেতন সত্যি দুঃখজনক। মসজিদকেন্দ্রিক মক্তব, মাদ্রাসা, লাইব্রেরি তথা সার্বিকভাবে ইসলামি কেন্দ্র হিসেবে কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হলে আল্লাহ চান তো তাদের জীবন-জীবিকা আরো সম্মানজনক হতে পারে।
লেখক: অধ্যাপক, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট