বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সেবা কার্যক্রম ব্যাহত

সুফল আসছে না বিমানবন্দরে ই-গেট 

আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ০৭:০৯

অনেক প্রচার-প্রচারণা করে চালু করা হয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ই-পাসপোর্টধারীদের জন্য ই-গেট সেবা। ১১ মাস ধরে পরীক্ষামূলক ই-গেট ব্যবহারের পর গত বছরের ৭ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ই-গেটের কার্যক্রম উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনের পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৯৫ হাজার যাত্রী ই-গেট ব্যবহার করেছেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাসে  গড়ে ৫ লাখ যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। এই হিসাবে মোট যাত্রীর মাত্র ২ শতাংশ যাত্রী ই-গেট ব্যবহার করেছেন।

বিমানবন্দরে স্থাপন করা হয়েছে জার্মানি থেকে  আমদানিকৃত অত্যাধুনিক ২৭টি ই-গেট (ইলেকট্রনিক গেট)। গত ৭ই জুলাই সেটি উদ্বোধনের পর ইমিগ্রেশনের জন্য যাওয়া যাত্রীরা কিছুদিন ব্যবহারও করেন। এরপর শুরু হয় কেন্দ্রীয় ই-পাসপোর্টের সঙ্গে ই-গেটের সার্ভারের সংযুক্ত নিয়ে জটিলতা। কিছুদিন যেতে না যেতে মাঝে মধ্যে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক ই-পাসপোর্টধারী যাত্রী বিমানবন্দরে বহির্গমনের সময় ই-গেট বন্ধ দেখতে পান। ফলে তারা ম্যানুয়ালি ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বহির্গমন করেন।

 ই-গেট নিয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, একজন ই-পাসপোর্টধারী যাত্রী মাত্র ১৮ সেকেন্ডেই নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। ই-পাসপোর্টধারী যাত্রী ভেরিফিকেশন শেষে ই-গেট অতিক্রম করতে পারবেন। প্রথমে  পাসপোর্টের ডিজিটাল ছবিযুক্ত পৃষ্ঠা ই-গেটের মনিটরে স্পর্শ করতে হবে। ১০/১৫ সেকেন্ডের মধ্যে কাচের দরজা খুলে যাবে। ই-গেট দিয়ে প্রবেশ করার পর স্ক্যানিং গেটের সামনে দাঁড়ানোর পর ৫/৬ সেকেন্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-পাসপোর্টের যাবতীয় তথ্য ভেরিফাইড করবে। এরপর গেট খুলে যাওয়ার পর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম গতকাল জানান,  ই-গেট চালু হওয়ার পর থেকে সেটি ব্যবহার করে যাত্রীরা  সেবা পাচ্ছেন। গত জুন মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মোট ৯৫ হাজার যাত্রী ই-গেট ব্যবহার করেছেন। ই-গেট ব্যবহারের হার দিনদিন বাড়ছে। তবে সবার হাতে ই-পাসপোর্ট পৌঁছলে, ই-গেটের শতভাগ সুবিধা পাওয়া যাবে।

সম্প্রতি ফিলিপাইনে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিতে একজন যাত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। তিনি বিমানবন্দরের বহির্গমন শাখায় ইমিগ্রেশন করতে গিয়ে দেখেন ই-গেট কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা দেখতে পান। তিনি ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তার কাছে গিয়ে ই-গেট ব্যবহার করার ইচ্ছা জানান। কিন্তু ইমিগ্রেশন থেকে জানানো হয় যে সার্ভার জটিলতার কারণে ই-গেট বন্ধ রয়েছে। সাত দিন পর তিনি দেশে ফিরে আগমনী শাখায় ইমিগ্রেশনের কাউন্টারে ই-গেট বন্ধ দেখতে পান।

এ ব্যাপারে ইমিগ্রেশন শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, সার্ভার জটিলতার কারণে মাঝেমধ্যে ই-গেটের কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় না। তখন আমরা ম্যানুয়ালি ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করি। তিনি আরও বলেন, ই-গেট সম্পূর্ণরূপে চালু হলে ইমিগ্রেশনের চাপ কমে যাবে। যাত্রীদের অনেক সময় সাশ্রয় হবে।

দুবাইফেরত শাকিল আহমেদ জানান, আমি ই-পাসপোর্টধারী। দেশে আসার পর আমি ই-গেটে চলে যাই। কিন্তু, সেখানকার এক পুলিশ সদস্য জানান যে, ই-গেট সেবা বন্ধ রয়েছে। এরপর ইমিগ্রেশনের কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে প্রায় ১ ঘণ্টা লেগেছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২২ মার্চ দেশে ই-পাসপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথিবীর ই-পাসপোর্টধারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১৯তম দেশ। এরপর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ পাসপোর্টধারীকে ই-পাসপোর্ট দিয়েছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তর। আরও প্রায় ১ কোটি মেশিন রিডেবল (এমআরপি) পাসপোর্ট  রয়েছে। এখন থেকে এমআর পাসপোর্ট প্রদান বন্ধ রয়েছে।

ইত্তেফাক/এমএএম