সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের অনিশ্চিত জীবন

আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৩, ২০:৫৪

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা শিগগিরই তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হতে পারেন। যে এলাকাতে তারা বাস করছেন, সেটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চলছে। 

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের দক্ষিণে একটি আধা-মরুভূমি অঞ্চল মাসাফের ইয়াত্তা। সেখানে বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি জনপদ রয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলায় চূড়ান্ত রায় দেয়। রায় অনুসারে এই গ্রামীণ এলাকায় বাসরত প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই এলাকাটি ফায়ারিং জোন নাইন ওয়ান এইট নামেও পরিচিত, যা ইসরায়েল সেনা প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবেও ব্যবহার করে।

সম্প্রতি স্থানীয় গণমাধ্যম এবং ইসরায়েলের মানবাধিকার সংস্থাগুলোও আসন্ন উচ্ছেদ কার্যক্রমের ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

খালেট আথাবা গ্রামের ৩৫ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি বাসিন্দা জাবের দাবাবসেহ বলেন, ‘‘প্রতিদিন যেখানে সেখানে চেকপয়েন্ট বসিয়ে ওরা আমাদের ওপর আরও বেশি চাপ প্রয়োগ করে চলেছে। মূলত, তারা চায় যে আমরা এখান থেকে চলে যাই।''

পাঁচ সন্তানের বাবা দাবাবসেহ অনেক বছর ধরেই উচ্ছেদের হুমকির মধ্যেই এখানে বাস করছেন। তবে তিনি বলেন, দক্ষিণ হেব্রন পাহা়ড়ের এই এলাকাটিকে তিনি নিজের বাড়ি বলেই মনে করেন, এবং এখান থেকে তিনি যাবেন না।

আদালত এবং আদালতের বাইরেও মাসাফের ইয়াত্তা নিয়ে লড়াই চলছে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

অঞ্চলটিতে সরকারি কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বেসামরিক শাখা অবশ্য এমন কোনো আসন্ন উচ্ছেদ কার্যক্রম নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। তবে জানুয়ারিতে ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা জানায়, "ফায়ারিং জোন নাইন ওয়ান এইট একটি সামরিক এলাকা, যেখানে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী, আইডিএফ এর অনুমতি ছাড়া এখানে প্রবেশ এবং এর মাধ্যমে জীবনের হুমকি তৈরি করা একটি ফৌজদারি অপরাধ।''

জমিতে অধিকার কার?

মাসাফের ইয়াত্তার অবস্থান তথাকথিত এরিয়া সি এলাকাতে। ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরের যে ৬০ শতাংশ এলাকাই এই অঞ্চলে অবস্থিত। অঞ্চলটি পুরোপুরি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে।

২০২২ সালের মে মাসে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে ১৯৮০ সালে ফায়ারিং জোন নাইন ওয়ান এইট নামে পরিচিত সামরিক জোন ঘোষণা করার আগে মাসাফের ইয়াত্তার আটটি গ্রামের বাসিন্দারা এই এলাকায় তাদের বসবাস প্রমাণ করতে পারেনি। বলা হয়, বছরের নির্দিষ্ট, সীমিত সময়ে এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে, এমন সমঝোতা প্রস্তাবও গ্রামবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে।

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অবৈধ। গত কয়েক বছরে এইসব বসতি বিভিন্ন এলাকাতে বিস্তার লাভ করেছে। গত কয়েক সপ্তাহে জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের বসতি নির্মাণের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে।

আভিগাইল নামে একটি এলাকাতে বসতি আগে ইসারায়েলি আইন অনুসারেও অবৈধ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ইসরায়েলের নতুন কট্টর ডানপন্থি সরকার এটি সহ ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরে মোট নয়টি ইসরায়েলি বসতিকে বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দেয়।

এসব এলাকাতে বাস করা বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি প্রথাগত কৃষিকাজ এবং পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের দাবি, ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করে নেয়ার অনেক আগে থেকেই তারা এসব এলাকাতে বাস করছেন।

গত বছর মার্কিন কংগ্রেসের কিছু সদস্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের বলপূর্বক উচ্ছেদের ইসরায়েলী পরিকল্পনার প্রকাশ্য নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান। তারা এটিকে ‘চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের ভয়াবহ লঙ্ঘন' বলেও উল্লেখ করেন।

 

 

ইত্তেফাক/এফএস