২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন আঞ্জুমান আরা বন্যা। এর মাধ্যমে ঠাকুরগাঁওবাসী পেয়েছে প্রথম নারী মেয়র। আঞ্জুমান আরা বন্যাই এখন পর্যন্ত এ জেলার শীর্ষ কোনো জনপ্রতিনিধির আসনে বসা প্রথম নারী।
আঞ্জুমান আরা বেগম মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত ছিলেন। দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজও করেছেন। আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর কিছুদিন শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। তার স্বামী এ টি এম সামসুজ্জোহাও পেশায় সাংবাদিক। এ
তবে গৃহিণী থেকে মেয়র হবার যাত্রাটি মোটেই সহজ ছিল না আঞ্জুমান আরা বন্যার। স্বল্প আয়ের সংসারে একজন গৃহিণীর রুপে যেমন সংগ্রাম করেছেন, তেমনি নিজেকে প্রমান করতে ছুটে বেড়িয়েছেন।
আঞ্জুমান আরা ১৯৮৭ সালে এসএসসি পাশ করেন। এরপরে ৮৯ সালে ৪ বছর মেয়াদে নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হন। অধ্যায়নরত অবস্থায় ১৯৯২ সালে বিয়ে করেন । বিয়ের পরে আদর্শ গৃহিণী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে জান তিনি। স্বামীর স্বল্প আয়ের সংসারে প্রতিবন্ধী মেয়ে নিয়ে সংগ্রামী জীবন চলতে থাকে বন্যার। একজন প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে পরিবারের কষ্টের নিজ অভিজ্ঞতায় ২০০৮ সাল থেকে জেলার অন্যান্য প্রতিবন্ধী নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এর ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে সুইড বাংলাদেশ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের সূচনা হয় তার হাত ধরেই। এই সংগ্রামের ধারাবাহিতাই তাকে রাজনীতির অঙ্গনে পরিচিত করে তোলে।
মেয়র বন্যা বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবারে টানাটানির সংসার ছিল আমার। কাজের সুবাদে স্বামী বাইরে যেতেন। ছেলে স্কুলে বা কলেজে। আমারও সামাজিক কাজের দিকে ব্যাপক আগ্রহ ছিল। বাসায় প্রতিবন্ধী মেয়েকে একা ফেলে যাই কি করে। তাই অনেক সময় প্রতিবন্ধী মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে হইতো। সঙ্গে প্রতিবন্ধী মেয়ে, তাই আমার এ অবস্থা দেখে অনেকে হেসেছে, আর তা দেখে আমি দিনের পর দিন কেঁদেছি। কিন্তু কখনওই হতাশ হইনি। সেসকল মানুষকে বার বার হাসার সুযোগ করে দিয়েছি।
আঞ্জুমান আরা বন্যা জানান, সেবামূলক যে কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টাই তাকে এতদূর এনেছে। প্রথমে নার্সিং, এরপর সাংবাদিকতা ও পাশাপাশি ওকালতি করার চেষ্টাও করেছেন বন্যা। সামাজিক বিভিন্ন কাজে নিজেকে যুক্ত রাখার চেষ্টা করেছেন। জনসেবার স্বপ্ন লালন করতে বিভিন্ন সময় নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বার বার বিভিন্ন পদে দলীয় মনোনয়ন কিনেও ব্যর্থ হয়েছেন। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি।
সবশেষে ২০২১ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা মেয়র নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন তার দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও ধৈর্যের উপহার বলে মনে করেন বন্যা।
আঞ্জুমান আরা বন্যা মেয়র পদে অসীন হওয়ার মধ্যদিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলায় নারীরা অগ্রগামী হতে উৎসাহিত হবে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা।
ঠাকুরগাঁও প্রেশক্লাবের সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক মনসুর আলী মনে করেন, মেয়র বন্যার সংগ্রামী জীবন থেকে পাওয়া সফলতা ঠাকুরগাঁও জেলা তথা দেশের অন্যান্য নারীদের জন্যে উদাহরণ হতে পারে। চেয়ারে বসার দুই বছরে বন্যা একজন সফল মেয়র হবার প্রমাণ ইতোমধ্যে দিয়েছেন। ছোটো অবস্থান থেকে কীভাবে স্বপ্ন পূরণ করা যায় তা বন্যাকে দেখে শেখা সম্ভব।
ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কুরাইশী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। তিনি নারী নেতৃত্ব ও নারীদের কর্মমুখী করতে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন। তার উদাহরণ মেয়র বন্যা। বন্যা এ দুবছরে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছে। আশাকরি মেয়াদের আগামী সময়ে নিজেকে তিনি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবেন।