শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন

মির্জাপুরে গোড়াই শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের তীব্র সংকট

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৩, ০২:৩০

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের চাপ কম থাকায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে কারখানার উৎপাদন। মিলকারখানায় প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উৎপাদন বন্ধ হয়ে বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার বাতিল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমালিকরা।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্টিবিউশন কোং লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কম্প্রেশারের মূল পাইপে গ্যাসের চাপ না থাকায় এবং বিভিন্ন স্থানে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হওয়ায় গ্যাস সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। কবে নাগাদ সমাধান হবে তা-ও অনিশ্চিত। তবে মূল পাইপে গ্যাস সচল রাখার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

গোড়াই শিল্পাঞ্চলের একাধিক সূত্র জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন গোড়াই শিল্পাঞ্চলে ছোট বড় মিলে শতাধিক মিলকারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় ৩০-৪০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তবে, দীর্ঘ দিন ধরে এসব শিল্পকারখানায় গ্যাসের চাপ না থাকায় উৎপাদন শূন্যের কোঠায় নেমে যাচ্ছে। অনেক মিল বন্ধ হয়ে বেকার হয়ে পড়ছেন শ্রমিকরা। এছাড়াও মালিকপক্ষেরও শতশত কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।

এ ব্যাপারে নাহিদ কটন মিলস লি. এবং ডেলসি কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. ফারুক হোসেন বলেন, কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ক্রয়াদেশ এমনিতেই কমে যাচ্ছে। সেখানে যেসব ক্রয়াদেশ আসছে তা-ও যদি সময়মতো শিপমেন্ট না করা যায় তাহলে তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন। তিনি আরও বলেন, গোড়াই শিল্প এলাকায় ৫০ পিএসআইজি লাইনে গ্যাসের চাপ পাওয়া যাচ্ছে না। দাম বাড়ানো হলেও গ্যাসের সেবার মান একটুকুও বাড়েনি। গ্যাসের সংকট থাকায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে প্রতি মাসে তাদের কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। উৎপাদন বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে বারবার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও তারা বিষয়টির দিকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

একই অভিযোগ করেছেন, উত্তরা স্পিনিং মিলস, টেকনো স্পিনিং মিলস, কম্পিট কম্পোজিট, সাউথ ইস্ট টেক্সটাইল ও নিউটেক্স গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তা এবং পরিচালকরা। শিল্পাঞ্চল টিকিয়ে রাখতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে শিল্প মালিকদের সংগঠন গোড়াই-কালিয়াকৈর-কোনাবাড়ী ইন্ডাসট্রিয়াল ফোরামের সভাপতি বিধান রায় বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন গোড়াই, কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ী এলাকায় শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গত এক-দুই মাস ধরে গ্যাসের চাপ নেই। দিনরাত মিলে দুই-তিন ঘণ্টাও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। উৎপাদন না হওয়ায় তাদের কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। উত্পাদন না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে মালামাল দিতে না পারায় বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার বাতিল হচ্ছে। সেই সঙ্গে কারখানায় কর্মরত প্রায় ৩০-৪০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিষয়টির দিকে সরকারের উচ্চপর্যায় এবং তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি জোর দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্টিউিশন কো. লি. টাঙ্গাইল জোনাল অফিসের ম্যানেজার মো. খোরশেদ আলম বলেন, গোড়াই এলাকার শিল্পের মালিকদের পক্ষ থেকে গ্যাস না থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কমপ্রেশারের মূল লাইনে গ্যাসের চাপ না থাকায় শুধু শিল্পেই নয়, বিভিন্ন বাসাবাড়িতেও গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। তবে গ্যাস সচল রাখার চেষ্টা চলছে। আশা করা হচ্ছে, অল্প দিনের মধ্যে গ্যাস-সংকট থাকবে না।

ইত্তেফাক/এমএএম